নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাড়িতে বিস্ফোরণে তিন মাসের শিশুসহ দুই পরিবারের ১১ জন দগ্ধ হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস বলছে, গ্যাসের চুলার লিকেজে জমে থাকা গ্যাস থেকে আজ শুক্রবার সকাল পৌনে ছয়টার দিকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণে দগ্ধ লোকজনের মধ্যে শিশুসহ পাঁচজনকে গুরুতর অবস্থায় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিস্ফোরণে তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের দুটি দেয়াল উড়ে গিয়ে পাশের ভবনের ছাদে পড়েছে, ভেঙে গেছে ভবনের দরজা-জানালার কাচ।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি দগ্ধরা হলেন— মো. হাবিবুর (৪০), তাঁর স্ত্রী আলেয়া বেগম (৩৮), তাঁর ছেলে লিমন (১৭), মেয়ে মিম (১৮), তিন মাসের শিশু মাহিরা। দগ্ধ অন্যরা হলেন মো. সোনাহার (৪০), শান্তি আক্তার (৩০), সামিউল (২৫), মনোয়ারা (২২) ও সাথী (২৫)। অপর একজনের নাম জানা যায়নি। আহত লোকজনের বেশির ভাগই পোশাক কারখানার শ্রমিক।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার আল আমিনের মালিকানাধীন তিন তলা ভবনের তৃতীয় তলার বাম পাশের ফ্ল্যাটে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ওই ফ্ল্যাটের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের দুটি কক্ষের পুরো দেয়াল উড়ে গেছে এবং রান্নাঘর ও বাথরুমের দুটি দেয়াল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ভবনের অন্যান্য ফ্ল্যাটের দেয়াল, জানালা ও রুমের থাই ভেঙে গেছে।
বিস্ফোরণের ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই ফ্ল্যাট ও পাশের ভবনের লোকজন আতঙ্কে রাস্তায় নেমে আসেন। এই ঘটনায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
ওই বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক সাজু বেগম বলেন, তিন তলা ভবনের তৃতীয় তলার ডান পাশের ফ্ল্যাটের দুটি কক্ষে মো. হাবিবুর ও মো. সোনাহার নামের দুই পরিবারের ১১ জন থাকতেন। ভোরে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণে তৃতীয় তলার দেয়াল ভেঙে নিচে পড়ে যায়। আগুনের তাপ ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তাপে সবগুলো ফ্ল্যাটের দরজা ও জানালা ভেঙে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ্ আরেফিন প্রথম আলোকে জানান, সকাল পৌনে ৬টার দিকে গ্যাসের চুলার লিকেজে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে তিন তলা ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, দরজা-জানালা বন্ধ থাকায় লিকেজ থেকে গ্যাস জমেছিল।
চুলা জ্বালাতে অথবা বিদ্যুতের সুইচ অন করতে গিয়ে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, গ্যাস জমে থাকলে এই ধরনের বিস্ফোরণ হতে ৩০ সেকেন্ড সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে আগুনে পুড়ে যায়। তিনি বলেন, আগুনে দগ্ধ লোকজনের মধ্যে পাঁচজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। ছয়জনকে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণে দগ্ধ তিন মাসের শিশুসহ ৫ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আলেয়া বেগম (৩৮) নামের এক নারীর শরীরের বেশির ভাগ অংশ পুড়ে গেছে। অন্যদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।