নাতি, পুত্রবধূর মুখের দিকে তাকাতে পারছেন না মামুনের বাবা

আবদুল্লাহ আল মামুন
সংগৃহীত

শান্তিরক্ষী মিশনে যাওয়ার পর মুঠোফোনেই পরিবারের খবর নিতেন আবদুল্লাহ আল মামুন। আগামী দিনের পরিকল্পনার কথাও বলতেন। হঠাৎ দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। এখন দুই নাতি আর বউমার মুখের দিকে তাকাতে পারছেন না মামুনের বাবা আবদুস সাত্তার। কীভাবে তাঁদের সান্ত্বনা দেবেন, এই ভেবে নিজেও অস্থির হয়ে পড়ছেন।

গত সোমবার দিবাগত রাতে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সিরাজগঞ্জের বিএ কলেজ সড়কের বিন্দুপাড়ার ছেলে আবদুল্লাহ আল মামুন (৩৬)। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স করপোরাল হিসেবে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ বাড়িতে পৌঁছার পর থেকেই চলছে শোকের মাতম।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন ভাই এক বোনের মধ্যে মামুন ছিলেন সবার বড়। গত ২৯ মে তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে পৌঁছান। বাড়িতে রেখে যাওয়া স্ত্রী, দুই ছেলে, মা, ছোট ভাই আর বোনের খবর মুঠোফোনেই নিতেন তিনি। আগামী দিনের নানা রকম পরিকল্পনার কথাও বলতেন।

সেনাবাহিনী থেকে যোগাযোগ করে সব কাগজপত্র প্রস্তুত করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দু–চার দিনের মধ্যেই তাঁর মরদেহ বাড়িতে আসবে।
জাহাঙ্গীর আলম, মামুনের ছোট ভাই

মামুনের দুই ছেলে। বড় ছেলে বিলওয়াল আল মামুন (১০) স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। গত বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে। ছোট ছেলে জুবায়ের আলম তিন বছরের।

আবদুল্লাহ আল মামুনের বাবা আবদুস সাত্তার বলেন, মামুন স্ত্রী আর দুই ছেলেকে তাঁর হেফাজতে রেখে গেছেন। হঠাৎ দুর্ঘটনায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন ছেলে। এখন দুই নাতি আর বউমার মুখের দিকে তাকাতে পারছেন না তিনি। কীভাবে তাঁদের সান্ত্বনা দেবেন, এই ভেবে নিজেও অস্থির হয়ে পড়ছেন। বড় ছেলেকে হারিয়ে তাঁর স্ত্রীও পাগলপ্রায়। আবদুস সাত্তার বলেন, তাঁর ছেলের মৃত্যু বীরের মতো হয়েছে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সেখানে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তিনি। সবার কাছে তাঁর ছেলের জন্য দোয়া কামনা করেন তিনি।

মামুনের ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তাঁরা এখন ভাইয়ের মরদেহ বাড়িতে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী থেকে যোগাযোগ করে সব কাগজপত্র প্রস্তুত করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দু–চার দিনের মধ্যেই তাঁর মরদেহ বাড়িতে আসবে।’