পিরোজপুরের নাজিরপুরে তালতলা শাখা নদীর ওপর নাওটানা-পাকুরিয়া সেতুটি সাড়ে তিন বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে। এতে নদীর দুই পাশের ১৩ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। হাটবাজার, অফিস-আদালত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের জন্য দুটি খেয়ায় ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নাজিরপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে তালতলা শাখা নদীর ওপর ৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৫ সালের শেষ দিকে কার্গোর ধাক্কায় সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরের বছর ১১ জানুয়ারি আবারও কার্গোর ধাক্কায় সেতুটির ৫০ মিটার ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। তখন থেকে নদীর দুই পাশের লোকজন খেয়ায় নদী পারাপার হচ্ছে।
তালতলা শাখা নদীর পশ্চিম প্রান্তে পাকুরিয়া, শিংখালী, গোলারহাট, কদমবাড়ি, আছরা, জুগিয়া, সাচিয়া ও লড়া গ্রাম। পূর্ব প্রান্তে নাওটানা, জিলবুনিয়া, রামনগর, চাঁদকাঠি ও কলারদোনিয়া গ্রাম। এ ছাড়া ভেঙে যাওয়া সেতুর পূর্ব প্রান্তে দীর্ঘা মহিলা কলেজ, দীর্ঘা টেকনিক্যাল কলেজ, গাওখালী স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বৈঠাকাটা কলেজ, চাঁদকাঠী আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়, নাওটানা বিএন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলারদোনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলারদোনিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লেবুজিলবুনিয়া দাখিল মাদ্রাসা এবং গাওখালী বাজার ও চাঁদকাঠি বাজার, বৈঠাকাটা বাজার, কলারদোনিয়া বাজার ও দীর্ঘা বাজার রয়েছে। পশ্চিম প্রান্তের আটটি গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজ, হাটবাজার, উপজেলা সদর, হাসপাতাল ও জেলা হাসপাতালে যাতায়াতের জন্য খেয়ায় পারাপার হয়। আবার সেতুর পূর্ব প্রান্তের গ্রামগুলোর মানুষের পশ্চিম প্রান্তের গ্রামগুলোতে যেতে খেয়া পারাপার হতে হয়।
পাকুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা কামরুজ্জামান বলেন, ‘২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সেতুটি ভেঙে পড়ার পর আমরা নতুন করে সেতু নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে আসছি। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরেও সেতুটি নির্মাণ হয়নি। নদীর দুই পাশের গ্রামগুলোর মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। প্রতিদিন খেয়ায় কয়েক হাজার মানুষ ও শিক্ষার্থীর নদী পার হতে হচ্ছে।’
গত মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর পূর্ব প্রান্তে লোহার দুটি পিলারের ওপর সেতুর একাংশ দাঁড়িয়ে আছে। বাকি অংশ নদীতে পড়ে বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন দুটি ডিঙিতে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে।
নাওটানা বি এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রিমা আক্তার বলে, ‘প্রতিদিন চার টাকা দিয়ে খেয়ায় নদী পারাপার হতে হয়। ছোট নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নদী পার হয়। শিশুরা খেয়ায় নদী পার হতে ভয় পায়। এখানে সেতুটি নির্মাণ করা হলে আমাদের কষ্ট করে নদী পারাপার হতে হতো না।’
উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন মিয়া বলেন, এলজিইডি এখন আর লোহার সেতু নির্মাণ করছে না। ভেঙে যাওয়া সেতুর স্থলে গার্ডার সেতু নির্মাণ করার জন্য মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। সেতুর জন্য নকশা করা হচ্ছে। সেতু নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার পর নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।