সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সোহালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র নলকূপটি তিন মাস ও ধরমপাশার চামরদানী ইউনিয়নের সাজদাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নলকূপটি চার বছর ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পড়েছে পানির কষ্টে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তাহিরপুরের বাদাঘাট ইউনিয়নের সোহালা গ্রামের পাশে সোহালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। প্রাক্-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৯৫ জন শিক্ষার্থী আছে। শিক্ষক আছেন ১১ জন। বিদ্যালয়ের একমাত্র নলকূপটি তিন মাস আগে একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে নিরাপদ পানির জন্য ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা এখন আধা কিলোমিটার দূরের সোহালা গ্রামের মসজিদের নলকূপ থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করে।
বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আছিয়া আক্তার, পঞ্চম শ্রেণির জান্নাতুল ফেরদৌস ও ওয়াসেদ আহমদ জানায়, এত এত শিক্ষার্থী সারা দিন স্কুলে থাকে। কিন্তু বিদ্যালয়ে পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। বিদ্যালয়ের নলকূপটি অকেজো হয়ে যাওয়ায় তাদের খুব সমস্যা হচ্ছে। খাওয়ার পানির জন্য তাদের কষ্ট করতে হয়। গ্রামের মসজিদ থেকে পানি এনে পান করতে হয়। বিদ্যালয়ে দ্রুত একটি নতুন নলকূপ স্থাপন জরুরি বলে জানায় তারা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সরোয়ার জানান, নলকূপটি বেশ পুরোনো। একসময় পানির সঙ্গে কেঁচো আসতে দেখে শিক্ষার্থীরা এটা থেকে পানি পান করা ছেড়ে দেয়। পরে তারা একটি সংস্কার করান। এরপর একেবারে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশীলকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম রাব্বা জাহান বলেন, ‘এখানে একটি নলকূপ স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। আমি বিষয়টি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। তাঁরা বলছেন ওই বিদ্যালয়ের একটি নলকূপ স্থাপনের জন্য চেষ্টা করছেন। প্রয়োজনে আমি তাঁদের সঙ্গে আবার কথা বলব।’
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহাকারী প্রকৌশলী সুভাষ পুরকায়স্থ বলেন, বিদ্যালয়ে নলকূপ স্থাপনের জন্য আলাদা প্যাকেজে কাজ হয়। সোহালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পানির ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি লিখেছেন। এখানে একটি নতুন নলকূপ স্থাপন করা হবে। বরাদ্দ এলেই কাজ শুরু হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডির) অধীনে ২০১১-১২ অর্থবছরে ধরমপাশার সাজদাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার কক্ষের একটি একতলা পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। সে সময় সেখানে একটি অগভীর নলকূপও স্থাপন করা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে নলকূপটি বিকল হয়ে যায়। পরে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার এটি মেরামত করার চেষ্টা করা হলেও নলকূপটি সচল করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় ওই বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষক ও ১১৩ জন শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয় এলাকায় থাকা লোকজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাওয়ার পানি পান করতে হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক গোপীকা রঞ্জন সরকার বলেন, বিদ্যালয়ের ১১৩ জন শিক্ষার্থী ও ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। বিদ্যালয়ে থাকা নলকূপটি চার বছর ধরে বিকল রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অবগত রয়েছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার পারভীন বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। তাই কী অবস্থায় বিদ্যালয়টি রয়েছে, তা আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে বিদ্যালয়টির যাবতীয় সমস্যা সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডির) উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ওই বিদ্যালয় ভবন ও নলকূপজনিত সমস্যার বিষয়টি কেউ তাঁকে জানাননি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।