নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার ঘটনার সাত দিন পেরিয়ে গেলেও হেনস্তাকারী নারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ওই নারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণীকে পোশাক নিয়ে গালিগালাজ, মারধর ও শ্লীলতাহানি করেন এবং মুঠোফোনে ছবি তুলেন। রেলওয়ে পুলিশের ভাষ্য, ওই নারীকে শনাক্ত ও চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি বারবার স্থান ও মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন করছেন। দ্রুতই তিনি আইনের আওতায় আসবেন।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, তরুণীকে হেনস্তা করা ওই নারীর নাম শিলা আক্তার ওরফে সায়মা (৪৫)। তিনি শহরের উপজেলা মোড়ের ভাড়াটিয়া ফয়েজ আহমেদের স্ত্রী। প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি ফয়েজ আহমেদকে বিয়ে করেন। স্থানীয়ভাবে ওই নারী একজন ঘটক হিসেবে পরিচিত। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ওই নারীকে শনাক্ত করা হয়। গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ ও দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে তিনি বাসা ছেড়ে চলে যান।
এর আগে গত বুধবার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে আসেন ওই তরুণী ও দুই তরুণ। সকাল পৌনে ছয়টা পর্যন্ত স্টেশনটির ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে তাঁরা ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সাড়ে পাঁচটার দিকে স্টেশনে অবস্থানরত মধ্যবয়সী এক নারী ওই তরুণীকে হেনস্তা করেন।
এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণীকে ঘিরে রেখেছে একদল ব্যক্তি। এর মধ্যেই একজন নারী উত্তেজিত অবস্থায় তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন। বয়স্ক এক ব্যক্তিও কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হলে ওই নারী দৌড়ে তাঁকে ধরে ফেলেন। তাঁর পোশাক ধরে টান দেন ওই নারী। নিজেকে সামলে দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে চলে যান তরুণী। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা দুই তরুণকেও মারধর করা হয়। তাঁরাও দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে চলে যান। পরে ভুক্তভোগী তরুণী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দিলে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ রেলস্টেশনে গিয়ে তাঁদের ঢাকার ট্রেনে উঠিয়ে দেয়।
রেলওয়ে পুলিশ বলছে, সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গত শুক্রবার রাত নয়টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন এলাকা থেকে মো. ইসমাইলকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। পরে তাঁকে ভৈরব রেলওয়ে থানা-পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরের দিন শনিবার বিকেলে তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নরসিংদীর অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ সিদ্দিকীর আদালতে তোলা হয়। আদালত তাঁকে জেলহাজতে পাঠান এবং এই ঘটনায় মামলা করার নির্দেশ দেন।
ওই রাতেই ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ও ৩০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় মামলাটি করা হয়। মামলায় মো. ইসমাইল ও শিলা আক্তারের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও একজন নারী ও ৮ থেকে ১০ জন পুরুষকে আসামি করা হয়। গত সোমবার ইসমাইলকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
শনাক্ত হওয়ার পরও ওই নারীকে এখনো গ্রেপ্তার করতে না পারার কারণ সম্পর্কে মামলার বাদী ও নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী বলেন, ওই নারী তাঁর বাসা পরিবর্তন করেছেন। মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন করেছেন। একটু সময়ের জন্য মুঠোফোন খোলা রেখে আবার দীর্ঘ সময়ের জন্য তা বন্ধ রাখছেন। ব্যবহার করছেন কমপক্ষে তিনটি সিম। বারবার তাঁর স্থান ও মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তনের ঘটনাতেই স্পষ্ট হয়, তিনিই প্রকৃত আসামি। গ্রেপ্তারের ভয়ে তিনি এমনটা করছেন।
ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদাউস আহমেদ বিশ্বাস বলেন, ‘ওই নারীকে গ্রেপ্তারের আগপর্যন্ত আমাদের যৌথ অভিযান থামবে না। বারবার স্থান ও মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন করার কারণে ওই নারীকে গ্রেপ্তারে একটু সময় লাগছে। তবে খুব দ্রুত তিনি আমাদের হাতে ধরা পড়বেন, এটা নিশ্চিত।’