নেত্রকোনায় আজ বুধবারও ভারী বৃষ্টি হয়নি। সকালে কয়েকটি এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছে। বন্যার পানিও কমছে। তবে পানি নামার গতি খুবই ধীর। পানি নামায় জনমনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। রাস্তাঘাট, অনেকের বসতবাড়িতে পানি থাকায় এখনই সবাই বাড়ি ফিরতে পারছেন না। সোনালি ও সোমা তেমনই দুজন মা, যাঁরা নবজাতক নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিলেন। কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের নতুন চারতলা ভবনে আশ্রয় নেন তাঁরা।
গত শুক্রবার সকালে উপজেলা সদরের নয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা সোনালি বিশ্বাস (২০) স্বামী বিজন সরকারের সঙ্গে ১১ দিনের নবজাতক নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন। আর সোমা সরকার (৩৮) এক মাসের শিশু আদিত্যকে নিয়ে ছয় দিন ধরে সেখানে আছেন। ওই দুই দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁদের সন্তান জন্ম হয়। হাসপাতাল থেকে যেদিন বাড়ি ফেরেন সোনালি, পরের দিন সকালে তাঁদের বাড়িতে পানি ওঠে। তাঁদের ঘরে এখনো হাঁটুসমান পানি।
সোমা সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ১২ বছর পর সন্তান হওয়ায় কৃষক স্বামী তার নাম রেখেছেন আদিত্য। গত সোমবার তার জ্বর এলেও এখন ভালো আছে। তবে দুদিন ধরে পায়খানা না হওয়ায় চিন্তায় আছেন। বিষয়টি কলমাকান্দার ইউএনও মো. আবুল হাসেমকে জানালে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক দেখানোর ব্যবস্থা করেন তিনি।
ইউএনও আবুল হাসেম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, হাসপাতাল যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই হাজার হাজার বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। বেশির ভাগ বাড়িঘরে এখনো বন্যার পানি। পানি কমলেও তাঁরা বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো খাবারের পাশাপাশি খিচুড়ি রান্না করে দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সার্বক্ষণিক তাঁদের দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
ঘনিচা গ্রামের বাসিন্দা ফরিদ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি থেকে পানি নামছে। দুদিন ধরে বিদ্যুৎ আছে। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত ৭৫টি ইউনিয়নে গতকাল বেশ কয়েকজন বাড়ি ফিরলেও এখনো ৩৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৫ হাজার ৩৮০ জন পুরুষ, ৪৯ হাজার ৭১১ জন নারী, ১৮ হাজার ৯৮৮ জন শিশু ও ৭৩৯ জন প্রতিবন্ধীসহ ২০ হাজার গবাদিপশু আছে। পানিবন্দী আছে আরও প্রায় ১২ লাখ মানুষ। গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, মদন ও কেন্দুয়ায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নেত্রকোনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহনলাল সৈকত বলেন, পানি কমলেও উব্দাখালি নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ও ধনু নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আর দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী, জারিয়ার কংসের পানি বিপৎসীমার অনেক নিচে আছে। এখনো নেত্রকোনা বড়স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জ রেলপথের ২৯ কিলোমিটার এলাকায় ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। ত্রাণের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এ পযন্ত ২১২ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ৫ লাখ টাকাসহ শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।