ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে তিতাস নদের কুরুলিয়া অংশে পাড় ভরাট করে শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক স্থাপন করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, ঠিকাদার জায়গা দখল করতে তাঁর বাড়ির সামনে এভাবে ব্লক বসাচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারাও নদীর পাড় ভরাটের পক্ষে কথা বলছেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, ২০১০ সালের দিকে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। সেই সীমানার অনেক বাইরে গিয়ে সেখানকার অংশ বালু দিয়ে ভরাট করে নতুন বাঁধ নির্মাণ করেছেন ঠিকাদার। ২০১০ সালের পর নদীর আর কোথাও নতুন করে বাঁধ স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরে হঠাৎ করে নদীর কাউতলীর কুরুলিয়া অংশে ঠিকাদারের বাড়ির সামনের এলাকায় বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি সন্দেহের সৃষ্টি করছে।
পাউবো সূত্র জানায়, তিতাস নদের কাউতলীর কুরুলিয়া অংশে আগে ছোট ছোট বালুর বস্তা দিয়ে ক্ষণস্থায়ী একটি বাঁধ ছিল। বর্ষায় নদীর দুই পাড় ভাঙে। পাড়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর নদীর আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় সেখানে ব্লক স্থাপন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পাউবো। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কাউতলীতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৭ ফুট শহর রক্ষা বাঁধের ব্লক নতুন করে স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাইমা এন্টারপ্রাইজের মালিক মোখলেছুর রহমান ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার কাজটি পান। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কাজটি শেষ না হওয়ায় ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়ায় পাউবো। বর্তমানে ব্লক স্থাপনের কাজ চলছে। মোখলেছুর তিতাস নদের করুলিয়া খাল-সংলগ্ন ক্ষতিগ্রস্ত ব্লক স্থাপন এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয় লোকজন বলেন, নিজের বাড়ির সামনে বাঁধের ব্লক স্থাপনের জায়গা হওয়ায় ঠিকাদার কৌশলে প্রায় ৫-৭ শতাংশ নদীর জায়গা মাটি দিয়ে ভরাট করেছেন। তারপর সেখানে পাউবোর ব্লক বসানোর কাজ শুরু করেছেন।
কাউতলী এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, ঠিকাদার মোখলেছুর স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এবং পাউবোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় নদীর পাড় দখল করে শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছেন। আর এখানে নতুন করে এখন বাঁধ স্থাপনের কোনো দরকার ছিল না। পাড়ের জায়গা দখল করতেই এমনটি করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাউবোর এক কর্মকর্তা বলেন, নদী ভরাটের কোনো সুযোগ নেই। ২০১০ সালের দিকে শহরের মেড্ডা থেকে কাউতলী পর্যন্ত ব্লক দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। তখনকার সীমানা থেকে প্রায় ১৪-১৫ ফুট নদীর ভেতরে এখন বাঁধটি দেওয়া হয়েছে। এভাবে পাড় ভরাট করে ব্লক স্থাপন করলে নতুন জায়গার সৃষ্টি হবে।
ঠিকাদার মোখলেছুর রহমান বলেন, তাঁর বাড়ির ১৭-১৮ কানি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাঁরা এখনো নদীর পাড়ে ঝুঁকি নিয়ে আছেন। তাঁরা নদীর কোনো জায়গা দখল করেননি। ৩৫ মিটার বাঁধ স্থাপনের কাজ তিনি করছেন। আর তাঁর বাড়ির সামনে বাঁধ স্থাপন করা হচ্ছে, এটা কি তাঁর দোষ?
পাউবোর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাস বলেন, মেরামতকাজ একটু সম্প্রসারণ করে করা হচ্ছে। আর ব্লক স্থাপনের কাজটি নদীর দিকে একটু বেড়েছে। সেখানে ঠিকাদারসহ অন্যদের বাড়িঘর রয়েছে। এলাকার লোকজন দেখা করে জানিয়েছেন, অধিগ্রহণ ও পাড় ভেঙে যাওয়ায় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত। সোজা করে ব্লক স্থাপনের জন্য তাঁরা অনুরোধ করেছেন। তাই কাজটি তাঁরা একটু সমানের দিকে এগিয়ে করার জন্য ঠিকাদারকে বলেছেন। তিনি আরও বলেন, এখানে জায়গার মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন থাকার কথা না। যদি ভরাট করা জায়গার মালিক সরকার হয় আর ঠিকাদার সেটি দখল করে থাকেন, তাহলে যেকোনো সময় সরকার তাঁদের স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারবে।
নদী ভরাট করে বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে আইনজীবী জহিরুল ইসলাম বলেন, নদী ও ভূমি-সম্পর্কিত সব আইনেই নদী রক্ষার কথা বলা হয়েছে। কোনোভাবেই নদী ভরাটের সুযোগ নেই।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীর পাড়ে সেখানে নতুন করে জায়গা তৈরি হচ্ছে, যার মূল্য কোটি টাকা। সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিলে জেলা প্রশাসকের কাছে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।