পদ্মা ও যমুনা নদীতে হঠাৎ পানি বাড়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরিতে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। অস্বাভাবিক পানি বাড়ায় দৌলতদিয়ার ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট বন্ধ রয়েছে। পাটুরিয়া প্রান্তে একটি ঘাট সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ ছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে এ সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দৌলতদিয়া প্রান্তে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রায় ৬ কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়েছে।
ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে কিছুদিন আগেও পর্যাপ্ত ফেরি থাকলেও বেশ কিছুদিন ধরে বহরে থাকা ২২টি ফেরির মধ্যে ৩টি ফেরি বিকল হয়ে আছে। আরেকটি ফেরি গতকাল অন্য রুটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। নদীতে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়ায় এবং ফেরি ও ঘাট স্বল্পতার কারণে উভয় ঘাট এলাকার মহাসড়কের দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। উভয় ঘাটে অন্তত সহস্রাধিক পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও যাত্রীবাহী বাস দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকা পড়ে আছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার থেকে পদ্মা ও যমুনা নদীতে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়ছে। রাতের মধ্যে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়ায় দৌলতদিয়ায় চারটি ঘাটের মধ্যে ৪ এবং ৫ নম্বর ঘাটের পন্টুনের র্যাম তলিয়ে যায়। তাই আজ শুক্রবার ভোর থেকে ঘাট দুটি দিয়ে যানবাহন পারাপার বন্ধ রয়েছে। বাকি ৩ এবং ৭ নম্বর ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হয়। তবে বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আজ সকাল ৮টার পর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ৬ নম্বর ঘাটটি চালু করা হয়। পাটুরিয়া প্রান্তে সব কটি (চারটি) ঘাটের পন্টুনের র্যামের মাথা তলিয়ে গেলেও ঝুঁকিপূর্ণভাবে ফেরিতে গাড়ি ওঠানামা অব্যাহত আছে।
আজ শুক্রবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ পদ্মার মোড় পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফেরি পারের অপেক্ষায় আছে সাত শতাধিক পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে গাড়ির চালক ও যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সিরিয়ালে আটকে থেকে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চালু থাকা ৩ নম্বর ঘাট দিয়ে শুধু পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার করা হচ্ছে এবং ৭ নম্বর ঘাট দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস পারাপার করা হচ্ছে। বড় ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট বন্ধ থাকায় ৭ নম্বর বড় ঘাটটিতে ফেরিজট দেখা দিয়েছে। এই ঘাটে চারটি বড় এবং দুটি ছোট ফেরিঘাটে ভেড়ার অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। আজ সকাল ১০টা বাজলেও ঘাট সংস্কারের কাজ শুরু না হলেও দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে জানা যায়।
দর্শনা থেকে ছেড়ে আসা দর্শনা ডিলাক্স (ডিডি) পরিবহনের চালক মিজানুর রহমান ৭ নম্বর ফেরিঘাটে আলাপকালে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে গোয়ালন্দ শহরের জামতলা এসে সিরিয়ালে আটকা পড়েছেন। কচ্ছপ গতিতে সামান্য একটু সামনে যাওয়ার পরই জানতে পারেন পন্টুনে পানি ওঠার কারণে দুটি ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় আট ঘণ্টা সিরিয়ালে আটকে থাকার পর তাঁদের গাড়িটি ফেরির দেখা পেয়েছে।
দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকা ট্রাকচালক আবুল হোসেন বলেন, ‘জীবনটাই এখন ট্রাকের ভেতরে পার করতে হচ্ছে, আমাদের কষ্টের কথা বলে কি লাভ, এই সব বলে কোনো লাভ হবে না। ঘাটে এলে ভোগান্তিতে পরতেই হবে, তা ছাড়া বর্তমানে ঘাটে দালালদের কারণে বেশি সমস্যা হচ্ছে, এসব বিষয়ে সবাই জানে, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ কেউ নেয় না।’
আবুল হোসেনের মতো দৌলতদিয়া প্রান্তে নদী পার হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পাঁচ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক। ফেরির নাগাল পেতে যানবাহনগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানগুলো পার হতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগছে। সিরিয়ালে শতাধিক যাত্রীবাহী যানবাহন থাকলেও পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি।
অপরদিকে পাটুরিয়া প্রান্তে দেখা যায়, ফেরিঘাটের পন্টুনের র্যামের মাথা তলিয়ে যাওয়ায় তার ভেতর দিয়ে ফেরিতে গাড়ি ওঠানামা করছে। এ ছাড়া ফেরি ঘাট থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা গাড়ির লাইন। দুই লাইনে অন্তত তিন শতাধিক গাড়ি ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায়।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই দিনে প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। হঠাৎ করে পদ্মা ও যমুনা নদীতে অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়ায় দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাটের অধিকাংশ ঘাটের র্যামের মাথা তলিয়ে গেছে। দৌলতদিয়ার ৪ ও ৫ নম্বর ঘাটের র্যাম তলিয়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা ব্যাহত হচ্ছে। তবে আজ ভোর থেকে ঘাট দুটি দিয়ে যানবাহন ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প হিসেবে ৬ নম্বর ঘাটটি আজ সকালে চালু করা হয়েছে। তবে ঘাটটি ছোট হওয়ায় বড় ফেরি ভিড়তে পারছে না। ঘাট দুটি দ্রুত সংস্কার করে শুক্রবার সন্ধ্যার আগেই যানবাহন পারাপারের উপযোগী করা হবে বলে তিনি জানান।