নতুন বই পেল না ওরা

এই শিশুরা নতুন বই পায়নি। গতকাল বীরগঞ্জ উপজেলার বড়কালা এলএসএস বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ছবি: প্রথম আলো
এই শিশুরা নতুন বই পায়নি। গতকাল বীরগঞ্জ উপজেলার বড়কালা এলএসএস বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।  ছবি: প্রথম আলো

বছরের প্রথম দিন গত বুধবারই দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের হাতে উৎসব করে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত নতুন বই পাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বড়কালা এল এস এস বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বই না পাওয়ার কারণ জানতে চেয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে ইউএনও বলছেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাঁর কাছে বইয়ের জন্য আসেননি।

হাজিরা খাতা অনুযায়ী বিদ্যালয়টিতে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক আছেন চারজন। বিদ্যালয়টি ২০১৫ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি পায়। ২০১৮ ও ২০১৯ সালের সমাপনী পরীক্ষায় বিদ্যালয়টিতে পাসের হারও ছিল শতভাগ।

বিদ্যালয়টির নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ১৯৯০ সালে নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্পের অধীনে বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। ওই গ্রামের লাল বাবু বিদ্যালয়টির জন্য ১১ শতক জমি দান করেন। ১৯৯৯ সালে মেয়াদ শেষ হলে প্রকল্প ব্যবস্থাপক বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ২০১৫ সালের শেষ দিকে জাতীয়করণের আলোচনায় এলে বিদ্যালয়টির জমিদাতা লাল বাবু আপত্তি তোলেন। তিনি জমি ফেরত পেতে আদালতে মামলা করেন। আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত না ঘটানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে বিদ্যালয়টি পরিচালনাসহ শিক্ষার্থীদের বই বিতরণে কোনো বাধা না দিতে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন। এরপরও এবার বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা বই পায়নি।

এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক প্রতিমা রানী বলেন, ‘আমার ছেলে এই স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছে। এখন কলেজে পড়ে। মেয়েকেও এই স্কুলে দিয়েছি। এবার চতুর্থ শ্রেণিতে উঠল। সব স্কুলে বই দেওয়া হলো, কিন্তু এই স্কুলে দেওয়া হলো না। মেয়েটার মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেছে।’

জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন নেসা বলেন, ‘চলতি বছরে ১১১ জন শিক্ষার্থীর বইয়ের চাহিদা দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আবেদন করি। কিন্তু সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) পরিতোষ রায় জানান, আমার স্কুলে বই দেওয়া হবে না। ইউএনওর নিষেধ আছে। পরে ইউএনওর সঙ্গে দেখা করলে তিনি বলেন, স্কুলের ঝামেলা মিটিয়ে আসেন। তারপর বই দেওয়া হবে। পরে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে ইউএনওর কাছে গিয়েছি। এরপরও বই দিতে রাজি হননি।’

এ বিষয়ে ইউএনও মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, গত বছর যে ঠিকানা দেখানো হয়েছিল, এবার সেই ঠিকানায় স্কুল পাওয়া যায়নি। তাই বই দিতে নিষেধ করা হয়েছে। বই না পাওয়ার বিষয়েও কেউ যোগাযোগ করেনি। প্রধান শিক্ষক এলে অবশ্যই বই দেওয়া হবে।

টাকা নিয়ে বই বিতরণ, শিক্ষকের দণ্ড

এদিকে টাকা নিয়ে বই বিতরণ করার দায়ে বিরল উপজেলার কামদেবপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম হোসেনকে জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাবের মো. সোয়াইব তাঁকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।