জুমের নতুন ধান উঠেছে ঘরে। তাই উৎসবের আমেজ লেগেছে খেয়াংপাড়ায়। নতুন চালের পিঠাপুলি ও ভাতের আয়োজন তো আছেই। এর সঙ্গে আছে ঐতিহ্যবাহী নাচ–গান। নবান্ন বা বুটাহ প্যই উৎসবে জেগে উঠেছে গোটা পাড়া। গতকাল শনিবার বান্দরবান সদর উপজেলার গুংগুরুমুখ খেয়াংপাড়ায় গিয়ে এমন উৎসবের আমেজ দেখা গেল।
জেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-রাঙামাটি সড়কে গুংগুরুমুখ খেয়াংপাড়ার অবস্থান। এখানে ৫০ খেয়াং পরিবারের বসবাস। গতকাল সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, পাড়ার বাসিন্দা চিংসাউ খেয়াংয়ের বাড়িতে বুটাহ প্যই বা নবান্নের আয়োজন শুরু হয়েছে। তাঁর বাড়িতে হচ্ছে মূল আয়োজন। উৎসবে যোগ দিতে এসেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুরও। তাই পাড়াবাসীর মধ্যে উৎসাহের কমতি নেই। এই উৎসবে সহযোগিতা করছে বান্দরবানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট (কেএসআই)।
গুংগুরুমুখপাড়ায় বুটাহ প্যই উৎসবকে ঘিরে আশপাশের পাড়া থেকেও খেয়াংরা এসেছে। সব মিলিয়ে একটা মিলনমেলার পরিবেশ। কথা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মংহ্লাপ্রু খেয়াংয়ের সঙ্গে।
তিনি জানান, খেয়াংরা যেকোনো কারোর পারিবারিক উৎসবে একত্রিত হন। জেলার আশপাশে বান্দরবানের হালং ইউনিয়নে ও চট্টগ্রামের চন্দনাইশের ধোপাছড়িতে আরও চারটি খেয়াংপাড়া আছে। সব মিলিয়ে এলাকায় আড়াই শ পরিবারের মতো খেয়াং রয়েছে। তারা সবাই পরস্পরের আত্মীয়। এ জন্য গুংগুরুমুখপাড়ায় সবাই এসেছে।
নবান্ন উপলক্ষে চিংসাউ খেয়াংয়ের জুমে তৈরি হয়েছে পূজার বেদি। সেখানে ওঝা (পূজা-পার্বণ পরিচালনাকারী) বুগেলেমা দেবতাকে উদ্দেশ করে পূজা দিয়েছেন। এ পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসব। ওঝা জুমের ধান, তিল-তিসি, তুলা, মরিচসহ ফসলের বরকত কামনা করেন দেবতার কাছে। দেবতাকে উৎসর্গ করেন একটি মুরগি।
পূজা শেষে খানাপিনা, নাচে, গানে মেতে ওঠেন খেয়াং তরুণ-তরুণীরা। এ সময় মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক জনগোষ্ঠীকে নিজেদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও বিকাশে সচেতন এবং সক্রিয় হতে হবে।
বীর বাহাদুর আরও বলেন, খেয়াংদের এ বুটাহ প্যই উৎসবকে প্রতিবছর আয়োজনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা দরকার। কেএসআইকে সেই উদ্যোগে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম কাউছার হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বদিউল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম, জেলা পরিষদ সদস্য ম্রাসা খেয়াং প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলায় প্রায় তিন হাজার খেয়াংয়ের বসবাস রয়েছে।