ঠাকুরগাঁও

অভয়াশ্রমে অবাধে চলছে মা মাছ নিধন

নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অভয়াশ্রমে ধরা হচ্ছে মা ও পোনা মাছ। গতকাল সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের টাঙ্গন নদে
প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁওয়ে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য নদ-নদীতে গড়ে তোলা হয়েছে অভয়াশ্রম। এসব অভয়াশ্রমে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা অমান্য করে বিভিন্ন প্রজাতির মা ও পোনা মাছ ধরা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষও তেমন নজরদারি করছে না। এতে দেশি প্রজাতির মাছের বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ১১ টির মৎস্য অভয়াশ্রম রয়েছে। তবে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সাতটি অভয়াশ্রমের নাম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার পৌর এলাকার টাঙ্গন নদে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পশ্চিম পাশে ও সুক নদের বুড়িরবাঁধ এলাকায়, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার তীরনই নদীর পাইলট বিদ্যালয়ের পেছনে রূপপুরে রানীশংকৈল উপজেলার রাজবাড়ী এলাকার কুলিক নদে, হরিপুর উপজেলায় ধীরগঞ্জ এলাকায় এবং পীরগঞ্জের টাঙ্গন নদের গাঞ্জনদহ ও কদমতলী এলাকায় মাছের অভয়াশ্রম রয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১১টি মৎস্য অভয়াশ্রম রয়েছে। অভয়াশ্রম ঘোষণার পরে নদের তীরে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে বেড়া দিয়ে স্থানগুলো ঘিরে দেওয়া হয়। বাঁশের খুঁটির মাথায় লাগিয়ে দেওয়া হয় লাল নিশান। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মাছের পাশাপাশি সরকারিভাবে সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা মাছ অবমুক্ত করা হয়। অভয়াশ্রম বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছের আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তোলা হয়।

সরকারিভাবে উপজেলা গভর্ন্যান্স প্রজেক্টের আওতায় ২০১৮ সালে ঠাকুরগাঁও শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত টাঙ্গন নদের ১ দশমিক শূন্য ৫ হেক্টর এলাকায় মৎস্য রানি অভয়াশ্রম ঘোষণা করে মৎস্য বিভাগ। কিন্তু নজরদারির না থাকায় কিছুদিনের মধ্যে তা অরক্ষিত হয়ে পড়ে। এখন সেখানে একটি সাইনবোর্ড ছাড়া অভয়াশ্রমের আর কোনো চিহ্ন নেই। ওই সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘মৎস্য অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ। মৎস্য অভয়াশ্রম নির্ধারিত এলাকার বাইরে মৎস্য সংরক্ষণ আইন মেনে চলুন। মৎস্য সংরক্ষণ আইন অমান্যকারীর জেল অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত অপরাধ।’

গত সোমবার জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পশ্চিম পাশে টাঙ্গন নদ ও বুড়িরবাঁধ এলাকার সুক নদের অভয়াশ্রমে দেখা যায়, বড়শি ও ফিকা জাল দিয়ে ছোট (পোনাজাতীয় মাছ) ও বড় মাছ শিকার করছেন কয়েকজন।

নদপারের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলে ও শৌখিন মাছশিকারিরা জাল দিয়ে মাছ ধরেন। রুই, কাতলা, ট্যাংরা, পুঁটিসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ ধরা পড়ছে। মৎস্য বিভাগের নজরদারি না থাকায় লোকজন অবাধে জেলার বিভিন্ন অভয়াশ্রমে মাছ ধরছেন।

জেলা প্রশাসকের বাসভবনের পশ্চিম পাশে টাঙ্গন নদে অভয়াশ্রমে ফিকা জাল দিয়ে মাছ ধরছিলেন গোলাম মোস্তফা নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘মৎস্য অভয়াশ্রমটি যখন ঘোষণা করা হয়ছিল, তখন আমরা এখানে মাছ ধরতাম না। পরে অনেকেই সেখান থেকে মাছ ধরা শুরু করেন। তাঁদের দেখাদেখি আমিও মাছ ধরছি। আমি মনে করেছিলাম, এই অভয়াশ্রমের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।’

সম্প্রতি সদর উপজেলার বুড়িরবাঁধ এলাকার সুক নদের মৎস্য অভয়াশ্রম থেকে মাছ ধরার অভিযোগে আটজনকে কারাদণ্ড ও দুজনকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ বিষয়ে শহরের কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবুল হোসেন বলেন, অভয়াশ্রম থেকে মা মাছ শিকার করা উদ্বেগের বিষয়। অভয়াশ্রমই যদি মাছশিকারিদের হাত থেকে রক্ষা না পায়, তাহলে মাছ রক্ষা হবে কেমন করে। আর মা মাছ রক্ষা না পেলে দেশীয় মাছের সংরক্ষণ সম্ভব হবে না।

টাঙ্গন নদের মৎস্য রানি অভয়াশ্রমের স্থানীয় ব্যবস্থা কমিটির সভাপতি আবদুল মজিদ বলেন, গত বছরের বর্ষায় অভয়াশ্রমের খুঁটি ও বেড়া বিলীন হয়ে যায়। বরাদ্দ না থাকায় পরে সেখানে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আফতাব হোসেন বলেন, অভয়াশ্রম স্থানীয় মৎস্য সমিতির সদস্যরা দেখভাল করেন। মৎস্য অভয়াশ্রমে মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই। সেখান থেকে যাঁরা মাছ ধরছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।