নওগাঁ পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা নজমুল হকের বিরুদ্ধে ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা তিনটায় পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান ওরফে সাগর এ অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন। শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আসাদুজ্জামান বলেন, গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলর হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তিনি বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারেন, পৌরসভার পয়োনিষ্কাশন খাতে দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে মেয়র নজমুল হক লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন। ঘটনার সত্যতা খুঁজতে তিনি সচিবের কাছে গত জুলাই ও আগস্ট মাসের চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের দৈনিক হাজিরার তালিকা দেখার জন্য আবেদন করেন। তালিকা না পেয়ে পরবর্তী সময়ে তিনি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাঁকে সেই তালিকা সরবরাহ করা হয়নি।
আসাদুজ্জামান বলেন, বিকল্প উপায়ে ওই তালিকা সংগ্রহ করে তিনি জানতে পারেন, ২ মাসে প্রতিদিন ১৫৭ জন শ্রমিক কাজ করেছেন। তালিকায় নাম থাকা ১৫৭ জনের মধ্যে ৫১ জনই ভুয়া শ্রমিক। তালিকায় নাম থাকলেও তাঁরা প্রকৃতপক্ষে ওই দুই মাস শ্রমিক হিসেবে কাজ করেননি এবং মজুরির টাকাও তোলেননি। যাঁদের মধ্যে আনিছুর নামের একজন শ্রমিক আছেন, যিনি ২০২০ সালের ৩ আগস্ট মারা যান। আনিছুরের বাড়ি সদর উপজেলার চকতাতারু গ্রামে। ২ মাসে ৫১ জন ভুয়া শ্রমিকের নামে ১৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকা আত্মাসাৎ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আসাদুজ্জামান আরও বলেন, পৌরসভার একাধিক মাসিক সভায় খাত অনুযায়ী আয় ও ব্যয়ের তথ্য জানতে চাইলে মেয়র নজমুল হক কোনো তথ্য দেননি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে গত বছরের ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত মাসিক সভার বিবিধ আলোচ্য সূচিতে পৌরসভায় জাতির জনকের ম্যুরাল স্থাপনের দাবি জানালে মেয়র নজমুল হক তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং রেজলুশন খাতা ছুড়ে ফেলে দেন।
আসাদুজ্জামান বলেন, মেয়রের বিরুদ্ধে ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ ও অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনার বিচার চেয়ে নওগাঁ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকসহ (ডিডিএলজি) সংশ্লিষ্ট শাখায় গত ২১ মার্চ লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল সোমবার দুপুরে সেই অভিযোগের তদন্তে পৌরসভায় আসেন ডিডিএলজি উত্তম কুমার রায়। তদন্ত চলাকালে জাকির আলী নামের একজন সাক্ষীকে মারধর করেন মেয়রের লোকজন। তিনি বর্তমানে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর আগে গতকাল সকালে মেয়র লোকজন নিয়ে তাঁর বাড়িতে গিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দেন। অভিযোগ তুলে নিতে অস্বীকার করলে মেয়র তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দেন।
অভিযোগের বিষয়ে পৌর মেয়র নজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাউন্সিলর সাগর একজন অ্যাডিক্টেড। তিনি আবোলতাবোল বকছেন। ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। একটি চক্রের ইন্ধনে আমাকে হেয় করার জন্য কাউন্সিলর সাগর এ ধরনের অভিযোগ করেছেন।’ হুমকি-ধমকির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, এটা সত্য নয়। তাঁকে কোনো ধরনের হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে ডিডিএলজি উত্তম কুমার রায় বলেন, নওগাঁ পৌরসভার মেয়রের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।