দেশসেরা পাঁচটি বেসরকারি কলেজের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে উত্তর বাংলা কলেজ। এটি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নে অবস্থিত।
১৯৯৪ সালের ৭ জুলাই কাকিনা রাজবাড়ী এলাকায় ধারাবাহিক সাফল্যের উজ্জ্বল এক বাতিঘর উত্তর বাংলা কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরের অধিবাসী অর্থনীতিবিদ মোজাম্মেল হক। তিনি গ্লাসগোভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন চ্যারিটি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান। কলেজটি ১৯৯৫ সালের জুন মাসে প্রথম এমপিওভুক্ত হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কলেজ পারফরম্যান্স র্যাংকিং-২০১৭–এ কলেজটি রংপুর বিভাগের সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থান দখল করে। আর শুধু রংপুর বিভাগের বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে এটি হয় প্রথম। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ (২০১৭) তালিকা অনুযায়ী, সারা দেশের বেসরকারি পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ পাঁচটি কলেজের মধ্যে এটির অবস্থান তৃতীয়। এদিকে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পারফরম্যান্স র্যাংকিং–২০১৬–এ রংপুর বিভাগের সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে পঞ্চম এবং ২০১৫ সালে একই বিভাগে একই ক্যাটাগরিতে ষষ্ঠ স্থান লাভ করেছিল।
২০১৮ সালের ২ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে কলেজটির অধ্যক্ষ এ এস এম মনওয়ারুল ইসলামের হাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পারফরম্যান্স র্যাংকিং ২০১৭ ও ২০১৬ সালের সনদসহ ক্রেস্ট তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সোহরাব হোসাইন। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর মিলিয়ে এখানে বর্তমানে সাড়ে ৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। দেশি ও বিদেশি চারজন অতিথি শিক্ষকসহ মোট ১৮০ জন শিক্ষক আছেন। ৯ দশমিক ৬৭ একর জমির ওপর স্থাপিত কলেজটিতে পাঁচটি পাকা ভবন, তিনটি বহুমুখী ভবন, পাঁচটি সেমিপাকা ভবন রয়েছে। ৫৫টি কক্ষ রয়েছে। ২৫ হাজার ২০৪টি বইসংবলিত আধুনিক সুযোগ–সুবিধাসমৃদ্ধ বহুতল লাইব্রেরি রয়েছে। লাইব্রেরিটি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর শিখ সম্প্রদায়ের অর্থায়নে ২০০১ সালের ২৭ এপ্রিল স্থাপিত হয়। ইন্টারনেট সার্ভিস সুবিধাসহ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে তুলতে ১৬৭টি কম্পিউটার রয়েছে। প্রজেক্টর ও অন্যান্য উপকরণসমৃদ্ধ ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব রয়েছে। এক হাজার আসনসংবলিত একটি আধুনিক অডিটরিয়াম কাম পরীক্ষার হল রয়েছে। যেখানে সেমিনার, সিম্পোজিয়ামসহ কলেজের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়।
এইচএসসি (বিএম) শিক্ষাকার্যক্রমের আওতায় ২০১৬ সালে ১২০ জন পরীক্ষা দিয়ে ৯০ জন, ২০১৭ সালে ৯৬ জনের মধ্যে ৯২ জন ও ২০১৮ সালে ১৭২ জনের মধ্যে ১৪৯ জন উত্তীর্ণ হয়। ২০১৫ সালে স্নাতকের (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষায় ২৮৫ জন অংশ নিয়ে সবাই, ২০১৬ সালে ২৩২ জন অংশ নিয়ে সবাই ও ২০১৭ সালে২৬১ জন অংশ নিয়ে সবাই উত্তীর্ণ হন।
২০১৬ সালে এইচএসসি (মানবিক) পরীক্ষায় ১৬২ জনের মধ্যে ১৪৫ জন, বিজ্ঞানে ৫২ জনের মধ্যে ৪৩ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ৯৬ জনের মধ্যে ৯২ জন পাস করেন। ২০১৭ সালে এইচএসসি মানবিকে ১৩৯ জনের মধ্যে ৯৮ জন, বিজ্ঞানে ৭১ জনের মধ্যে ৫৭ জন ও ব্যবসায় শিক্ষায় ৫৪ জনের মধ্যে ৩৯ জন পাস করেন। ২০১৮ সালে এইচএসসি মানবিকে ১৫৯ জনের মধ্যে ১২৯ জন, বিজ্ঞানে ৮৩ জনের মধ্যে ৬৪ জন ও ব্যবসায় শিক্ষায় ৬২ জনের মধ্যে ৪৪ জন উত্তীর্ণ হন।
২০১৪ সালে স্নাতক (পাস) মানবিকে ৮৭ জনের ৬০ জন, বিজ্ঞানের একজন পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন ও ব্যবসায় শিক্ষায় ২৬ জনের ১৯ জন পাস করেন। ২০১৫ সালে মানবিকে ১১৯ জনের ৮৯ জন, বিজ্ঞানের চারজন পরীক্ষা দিয়ে সবাই ও ব্যবসায় শিক্ষায় ৩৫ জনের ৩০ জন পাস করেন। ২০১৬ সালে মানবিকে ৮৩ জনের সবাই ও ব্যবসায় শিক্ষায় ২৩ জন পরীক্ষা দিয়ে সবাই উত্তীর্ণ হন।
শিক্ষার্থী তাহমিনা বেগম বলেন, ‘আমার এসএসসির ফল ভালো ছিল না। পরে এই কলেজে ভর্তি হয়ে ভালো ফল করি। আমার ভালো ফলের জন্য কলেজের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ ও শিক্ষকদের ভূমিকা রয়েছে।’ একই রকম কথা বলেন এই কলেজের শিক্ষার্থী জাকিয়া আক্তার।
কলেজের প্রভাষক তাবাসসুম রায়হান মোস্তাজির বলেন, ‘আমি এই কলেজের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি পড়াই। আমাকে শ্রেণিতে পাঠদানে সহায়তা করেন স্কটল্যান্ডের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আইসিটি বিশেষজ্ঞ আইরিন গ্রাহাম।’
কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নজরুল হক বলেন, ‘আমরা মোজাম্মেল হকের সুদূরপ্রসারী শিক্ষা বিস্তারের কর্মকাণ্ডে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে কলেজটির শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। এই কলেজের ধারাবাহিক সাফল্যে আমরা উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত।’
অধ্যক্ষ মনওয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘কলেজটির শিক্ষাদীক্ষার সুনাম ও সাফল্যের পেছনে রয়েছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, ব্যবস্থাপনা কমিটি, এলাকাবাসীসহ দেশি–বিদেশি বিদ্যানুরাগীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মোজাম্মেল হকের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এই সম্মানজনক স্থানে আসতে পেরেছি।’
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ বলেন, ‘জেলার শিক্ষাক্ষেত্রে সুনাম বৃদ্ধিতে কলেজটি ধারাবাহিকভাবে অবদান রেখে চলেছে। প্রত্যন্ত পল্লি এলাকার এমন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সার্বিক অর্থে শিক্ষাবিস্তারে অনুকরণীয় ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আমি এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য কামনা করি।’