ঢাকার ধামরাইয়ে এক যুবককে হাত-পা বেঁধে মারধরের অভিযোগে বালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. মজিবর রহমানসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার বিকেলে ইউনিয়নের সূত্রাপুর এলাকা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আটক করা হয়।
মারধরের শিকার যুবকের নাম ইসরাফিল হোসেন (৩০)। গতকাল রাত ১০টার দিকে তাঁর ভাই মো. আবদুল আওয়াল ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করলে আটক ১২ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সবাই মজিবর রহমানের সমর্থক বলে জানা যায়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মজিবরের নির্দেশে সুজন নামের এক যুবক ইসরাফিলকে বাড়ি থেকে ডেকে সূত্রাপুর চৌরাস্তায় নিয়ে যান। পরে তাঁকে রাস্তার পাশে হাত-পা রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। এ সময় মজিবর ও তাঁর সহযোগীরা লোহার রড ও দেশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ইসরাফিলকে গুরুতর আহত করেন। খবর পেয়ে ইসরাফিলের স্ত্রী সেখানে গিয়ে তাঁদের বাধা দিলে তাঁকেও মারধর করা হয়। তাঁর শ্লীলতাহানি করা হয় বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে ধামরাই থানার কাওয়ালীপাড়া বাজার তদন্তকেন্দ্রের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। এ সময় মজিবরের লোকজন স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন যে পুলিশ তাঁদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ ঘোষণার পর মজিবরের লোকজন উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন। পরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ আট-নয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধামরাই থানায় নিয়ে আসা হয়। এদিকে আহত অবস্থায় ইসরাফিল ও তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধার করে সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে ঘটনার সময় মজিবর রহমান সেখানে ছিলেন না বলে তাঁর পরিবার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী দাবি করেন। এ ছাড়া ইসরাফিলের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় লোকজন তাঁকে মারধর করেছে বলে তাঁদের দাবি।
ইসরাফিলের বড় ভাই মো. আবদুল আওয়াল প্রথম আলোকে জানান, তাঁর ভাই এলাকায় নানা ধরনের সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। এলাকায় তাঁর বেশ গ্রহণযোগ্যতা আছে। কিন্তু মজিবর ও তাঁর সমর্থকেরা বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। তাঁরা প্রতিহিংসার কারণে ও এলাকায় একছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য শান্তি কমিটি বানিয়েছে। তাঁর ভাইকে হত্যা করার জন্য এভাবে মারা হয়েছে। এর আগেও মজিবর হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তবে ঘটনার সময় মজিবর রহমান সেখানে ছিলেন না বলে তাঁর পরিবার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী দাবি করেন। এ ছাড়া ইসরাফিলের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় লোকজন তাঁকে মারধর করেছে বলে তাঁদের দাবি।
ধামরাই থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. খাইরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনায় সময় আমি, থানা আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক আবদুল বাসেদ, চেয়ারম্যান মজিবর রহমানসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী এলজিইডির সাব–অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে ছিলাম। আমরা গাঁওতারা ব্রিজ থেকে বাস্তা বাজার ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের কাজ পর্যবেক্ষণে গিয়েছিলাম। ওই সময় মজিবরের মুঠোফোনে একটি কল আসে। মজিবর তখন আমাদের জানান সূত্রাপুরে ঝামেলা হয়েছে, তাই তাঁকে যেতে হবে। পরে তিনি চলে যান।’
মজিবরের বড় ভাই লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে জানান, বেশ কয়েক মাস আগে সূত্রাপুর গ্রামের মানুষ আবদুল গণির নানা কর্মকাণ্ডে অতিষ্ট হয়ে মানববন্ধন করে গ্রামে তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল। তাঁর অন্যতম সহযোগী হলেন ইসরাফিল। ইসরাফিলের সহায়তায় কিছুদিন আগে গণি আবার এলাকায় ফিরে এলে গ্রামে চাপা ক্ষোভ দেখা দেয়। এর মধ্যে গতকাল গণি ও ইসরাফিল স্থানীয় লোকজনকে কটাক্ষ করলে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে ইসরাফিলকে মারধর করেন।
ধামরাই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ওয়াহিদ পারভেজ জানান, ইসরাফিল হোসেনের বড় ভাই মো. আবদুল আওয়ালের করা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।