ধর্ষণের শিকার নারীকে বিয়ে করে কারামুক্ত এসআই

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

পঞ্চগড়ে বিধবা এক নারীকে (৩৭) ধর্ষণের দায়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল পুলিশের এক উপপরিদর্শককে (এসআই)। ওই নারীকে এবার বিয়ে করেছেন তিনি। এ সুবাদে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি মিলেছে তাঁর। পুলিশের ওই এসআইয়ের নাম আবদুল জলিল। সর্বশেষ তিনি কুড়িগ্রাম সদর থানায় কর্মরত ছিলেন।

পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মেহেদী হাসান তালুকদার বুধবার দুপুরে এ জামিন আদেশ দেন। এর আগে জেলহাজতে থাকা এসআই আবদুল জলিলকে বুধবার নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ওই নারীকে বিয়ে করবেন, এমন শর্তে জামিন আবেদন করেন। বিকেলে পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গণে দুই পক্ষের আইনজীবী ও স্বজনদের উপস্থিতিতে ওই নারীর সঙ্গে এসআই আবদুল জলিলের বিয়ে সম্পন্ন হয়। পরে বিয়ের কাবিননামা আদালতে দাখিল করে মুক্ত হয়ে বাড়িতে ফেরেন তিনি।

এসব বিষয় নিশ্চিত করে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মেহেদী হাসান বলেন, জলিলের আগের একজন স্ত্রী রয়েছেন। বিয়ের সময় প্রথম স্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন এবং বিয়েতে তিনি সম্মতিও দিয়েছেন। বিয়েতে ৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়েছে। বিয়ের পর জলিল কারামুক্ত হয়ে বাড়িতে ফেরেন।

এর আগে উচ্চ আদালত থেকে পাওয়া জামিনের মেয়াদ শেষ হলে গত রোববার আবদুল জলিল পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠান। বুধবার মামলার পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করে দেন আদালত।

আবদুল জলিলের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ২৫ মার্চ পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ধর্ষণের মামলা করেছিলেন ওই নারী। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে প্রথমে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ দেন। চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

এ মামলায় একই আদালত গত ২৩ জানুয়ারি জলিলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে তিনি উচ্চ আদালতে ছয় সপ্তাহের জামিন পান। ১৬ মার্চ উচ্চ আদালতের জামিনের মেয়াদ শেষ হলে ২০ মার্চ তিনি পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করেন। ওই দিন শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন।

মামলার এজাহার ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল পঞ্চগড় পৌরসভার পূর্ব জালাসী এলাকার বিধবা ওই নারী জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাঁর ভাশুরের বিরুদ্ধে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেই জিডির তদন্তের দায়িত্ব পান পঞ্চগড় সদর থানার তৎকালীন এসআই আবদুল জলিল। তদন্ত করতে গিয়ে ওই নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান জলিল। এরপর তিনি ওই নারীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর ওই নারীকে জলিল ধর্ষণ করেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, ওই নারীর পরিবারের লোকজন ধর্ষণের বিষয়টি জানতে পেরে জলিলকে আটক করেন। ওই দিনই দুই ব্যক্তিকে ডেকে এনে ওই নারীকে বিয়ে করেন জলিল। তবে সরকারি চাকরির কারণে বিষয়টি প্রকাশ্যে না আনতে অনুরোধ করেন জলিল। এরপর নানা সময়ে বিয়ের কাবিননামা দেখাতে বললে সময়ক্ষেপণ করতেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। পরে পঞ্চগড় জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান ওই নারী। এরপর জলিল বদলি হয়ে কুড়িগ্রামে চলে যান। এরপর দুই–একবার দেখা হলেও ওই নারীকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে রাজি হননি জলিল। ভুয়া কাবিনে বিয়ে হয়েছে দাবি করে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ওই নারীকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন তিনি।

বুধবার মামলাটির জামিন শুনানির সময় পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আজিজার রহমান, বাদীপক্ষের আইনজীবী মেহেদী হাসান, আসামিপক্ষের আইনজীবী রিয়ানুস সাঈদ ও আদম সূফিসহ অন্যান্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।