একজন ধর্ষক আর একজন রাজাকারের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। মানবতাবিরোধী অপরাধের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। তাই ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন নয়, মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। এর জন্য বিদ্যমান আইনের সংস্কার প্রয়োজন।
আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এক মানববন্ধনে অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল এসব কথা বলেন৷ ‘আমাদের সন্তানতুল্য ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে’ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। গত রোববার রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হন।
এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সংস্কারের কাজ করে, সেই প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী যখন এয়ারপোর্টের কাছাকাছি একটি জায়গায় ধর্ষণের শিকার হয়; তখন সমগ্র জাতির সামনে একটি প্রশ্ন এসে দাঁড়িয়ে যায়—এই দেশ কি ধর্ষকদের জন্য নিরাপদ হয়ে গেছে? আদালতের দীর্ঘসূত্রতার কারণে বিচার বিলম্বিত হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে যখন আমরা একটি মানবিক সমাজ গঠন করতে চাইছি; সেখানে নারীরা যদি নিরাপদ না হন, সেই লক্ষ্য কি আমরা অর্জন করতে পারব? বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী যখন ধর্ষণের শিকার হন, তখন আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের অপমানিত হতে হয়। দেশের সর্বোচ্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীও নিরাপদ নয়! আমরা চাই এমন একটা সামাজিক বিপ্লব, যেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলবেন।’
আইনের প্রসঙ্গ টেনে এই শিক্ষক নেতা বলেন, ‘২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংস্কারের প্রয়োজন আছে। আইনটিতে বলা আছে—ধর্ষণের পর যদি হত্যা করা হয়, সে ক্ষেত্রে ধর্ষককে আইনে থাকা সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। ধর্ষক যদি স্বীকার করে যে সে ধর্ষণ করেছে, সে ক্ষেত্রে তাঁর শাস্তি হবে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড। ধর্ষণের চেষ্টা করলে অনধিক ১০ বছর ও অন্যূন পাঁচ সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান আছে। ১০ বছরের সাজা পরে কমে কমে গিয়ে দাঁড়ায় পাঁচ বছরে। এই হলো আইনে ধর্ষকের শাস্তি। এই আইন সংস্কারের প্রয়োজন।’
শিক্ষক সমিতির মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সমিতির সাবেক নেতা অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। তিনিও ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মেয়েটি যে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। এই ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার সংক্ষুব্ধ। বিভিন্ন উপায়ে ও ভাষায় আন্দোলন চলছে। সবার একই উদ্দেশ্য—সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। সমাজে যেন পাশবিকতা সংঘটিত না হয়, তার জন্য সমাজ-সচেতনতা সৃষ্টি করা একটি বড় কাজ। সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে সূচিত হলো। এমন পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা মনে হয় খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। কারণ, কঠিন অবস্থানে না গেলে সমাজে এসব পাশবিক ঘটনা আরও ঘটার সম্ভাবনা থেকে যাবে।’
শিক্ষক সমিতির সাবেক নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। ছাত্রজীবন মেলালে প্রায় ৪০ বছর হয়ে গেছে। এই ৪০ বছরে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখিনি। সে জন্য আমরা অত্যন্ত মর্মাহত এবং সেই ছাত্রীর পরিবারের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। ঘটনাটি জানার পর প্রশাসনিক পর্যায় থেকে যতটুকু করা সম্ভব, তার চেয়ে বেশি আমরা করার চেষ্টা করছি। ছাত্রীটি মানসিক ও স্বাস্থ্যগতভাবে এখন কিছুটা উন্নতি লাভ করেছে। কিন্তু সে এখন এমন পরিস্থিতিতে আসেনি যে তাঁকে মিনিটে মিনিটে জেরা করা হচ্ছে, একই কথা তাঁর মুখ দিয়ে বলানো হচ্ছে। পর্যাপ্ত ঘুমের সময়ও সে পাচ্ছে না। মেয়েটি অত্যন্ত ছোট। কিন্তু মেয়েটির যে মনোবল, তা আমাদের অনেক শিক্ষককে অভিভূত করেছে। সে বন্ধুদের সঙ্গে হলে বসে পরীক্ষা দিতে চায়।’
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন, সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, শিক্ষক সমিতির সাবেক নেতা চন্দ্রনাথ পোদ্দার প্রমুখ বক্তব্য দেন।