ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দি গ্রামে নিহত রাজু সাহা (২২) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি এক মুসলিম তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন। তদন্তে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। পুলিশের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আজ বুধবার রাজুর লাশ তাঁর স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছেন আদালত।
এদিকে রাজুকে হত্যার দায় স্বীকার করে গতকাল মঙ্গলবার রাতে ফরিদপুরের ৫ নম্বর আমলি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন জসীম মোল্লা (২১)। পরে এ আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাদীয়া আফরিন তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
রাজু কামারখালী গ্রামের মৃত সুজিত সাহার ছেলে। পরিবারসহ তিনি মাঝকান্দী গ্রামে ভাড়াবাড়িতে বাস করতেন। পাশেই দাসপাড়ায় তাঁরা বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। সেখানে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন জসীম। জসীমের বাড়ি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বামুন্দি গ্রামে।
গত রোববার সন্ধ্যায় নির্মাণাধীন বাড়ির শৌচাগারের ট্যাংক থেকে রাজুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সোমবার তাঁর মা অরুণা রানী সাহা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, গত রোববার সন্ধ্যায় নির্মাণাধীন বাড়ির শৌচাগারের ট্যাংক থেকে রাজুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সোমবার তাঁর মা অরুণা রানী সাহা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করেন। এতে গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজবাড়ীর বোয়ালমারী উপজেলার কাদিরদি চরপাড়া থেকে জসীমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর জসীম পুলিশের কাছে রাজুকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ নিয়ে দুপুরে পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জসীমের বরাত দিয়ে বলা হয়, রাজু ও জসীম একই তরুণীকে ভালোবাসতেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। তা ছাড়া জসীমের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। এ জন্য তাঁর টাকা দরকার হয়। বাড়ির কাজের জন্য জসীম টাকা চাইলে রাজু জানান, বাড়ির কাজ ঠিকাদারকে চুক্তিতে দেওয়া হয়েছে। তাই রাজুর পক্ষে জসিমকে টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। এতে জসীম মনঃক্ষুণ্ন হন।
ওই দুই কারণে রাজুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিরি। গত শনিবার তাঁর সঙ্গে নির্মাণাধীন ভবনে রাত কাটান রাজু। সে সময় জসীম লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে রাজুকে হত্যা করেন। হত্যার পর রাজুর হাতের দুটি স্বর্ণের আংটি, একটি ব্রেসলেট ও দুটো মুঠোফোন নিয়ে জসীম পালিয়ে যান। গ্রেপ্তারের পর তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বুধবার মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা মধুখালী থানার পরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেন বলেন, আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতেও জসীম এসব তথ্যই জানিয়েছেন।
আলোচনা শেষে স্ত্রী জাকিয়ার হাতে রাজুর লাশ তুলে দিয়ে ইসলামি রীতি মেনে শেষকৃত্যের আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়।মো. আলিমুজ্জামান, এসপি, ফরিদপুর
পুলিশ আরও জানায়, রাজুর মৃত্যুর পর আড়পাড়া গ্রামের জাকিয়া খান (২০) দাবি করেন, রাজুর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০১৮ সালের ৫ জুন রাজু ইসলাম গ্রহণ করে মাহমুদ আহমেদ নাম নেন। দুই দিন পর ৭ জুন তাঁরা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিয়ে করেন। তাঁদের ছয় মাসের সন্তান রয়েছে। তবে রাজুর মা দাবি করেন, তাঁর ছেলে অবিবাহিত।
এ অবস্থায় রাজুর লাশ কার কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং শেষকৃত্য কোন ধর্ম অনুযায়ী হবে, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এ কারণে লাশ কোনো পক্ষের কাছে হস্তান্তর না করে ফরিদপুর ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। জটিলতা নিরসনে ঘটনাটি তদন্তে মঙ্গলবারই মধুখালী থানার এসআই সাইফুদ্দিনকে ঢাকার মেট্রোপলিটন কোর্টে পাঠানো হয়। সেখানে জাকিয়ার কথার সত্যতা পাওয়া যায়।
এসপি মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ধর্মান্তরিত হওয়া ও বিয়ের ঘটনাটি নিশ্চিত হওয়ার পর আজ মধুখালী থানায় রাজুর মাসহ পরিবারের সদস্য, স্ত্রী ও এলাকার প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে স্ত্রী জাকিয়ার হাতে রাজুর লাশ তুলে দিয়ে ইসলামি রীতি মেনে শেষকৃত্যের আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। বিকেলে লাশ জাকিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।