রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী দূরপাল্লার বাস ও পণ্যবাহী গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। নদী পাড়ি দিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী এসব গাড়িকে ফেরিতে উঠতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে তিন থেকে চার ঘণ্টা করে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। একইভাবে পাটুরিয়া ঘাট প্রান্তে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে।
ঘাট–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ২০টি ফেরির স্থলে বর্তমানে ১৮টি চলাচল করছে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দুটি ফেরি পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় দেড় মাস ধরে বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ওই সব রুটের অধিকাংশ গাড়ি এ ঘাট ব্যবহার করছে। যে কারণে দৌলতদিয়া এবং পাটুরিয়া উভয় ঘাটে যানবাহনের লম্বা লাইন তৈরি হয়ে আছে।
শনিবার দুপুরে পাটুরিয়া ঘাটে দেখা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ফেরিঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা লাইনজুড়ে শুধু পণ্যবাহী ট্রাক, কার্ভাড ভ্যান, পিকআপ গাড়ি ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় সিরিয়াল দিয়ে রয়েছে। ফেরিঘাটের কাছে এসব পণ্যবাহী গাড়ির সঙ্গে রাজধানী ছেড়ে আসা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন রয়েছে। যাত্রীবাহী বাসগুলো স্বল্প সময় অপেক্ষার পর দ্রুত ফেরির নাগাল পেলেও পণ্যবাহী গাড়িকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
একইভাবে দৌলতদিয়া প্রান্তে ঢাকামুখী পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী দূরপাল্লার পরিবহনের লাইন প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা হয়েছে। ফেরিঘাট থেকে দৌলতদিয়া ঘাট ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় পণ্যবাহী গাড়ির সঙ্গে যাত্রীবাহী বাস ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। পণ্যবাহী গাড়ির সিরিয়াল ফেরিঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার লম্বা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ভবন পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।
এ ছাড়া দৌলতদিয়ার সাতটি ঘাটের মধ্যে ১ ও ২ নম্বর ঘাট দুই বছর ধরেই বন্ধ রয়েছে। বাকি ৩ থেকে ৭ নম্বর পর্যন্ত পাঁচটি ঘাট চালু থাকলেও ৭ নম্বর ঘাটের ডাউন পকেটের সামনে খননযন্ত্রের মাটি উত্তোলনের কাজ চলায় আংশিক ঘাট বন্ধ রয়েছে।
সাতক্ষীরা থেকে আসা একটি দূরপাল্লার পরিবহনের চালক আলাউদ্দিন শেখ বলেন, ‘দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সিরিয়ালে বসে আছি। এখনো ফেরিতে উঠতে আরও ঘণ্টাখানেক সময় লাগতে পারে। এদিকে প্রচণ্ড গরম ও আর রোদের মধ্যে যাত্রীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।’
যশোর থেকে আসা একটি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক সিরাজ সরদার বলেন, গতকাল শুক্রবার রাতে মালবোঝাই করে গাজীপুর যাবেন বলে মধ্যরাতে রওনা হন। ভোরের দিকে গোয়ালন্দ ঘাট থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে লম্বা সিরিয়ালের পেছনে পড়েন। তাঁর মতো এ রকম শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি আছে, যেগুলো প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে সিরিয়ালে আছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. জামাল হোসেন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ২০টি ফেরি থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটিতে দুটি ফেরি বিকল হয়ে পড়ে। তবে শনিবার দুপুরের আগেই একটি সচল হয়ে বহরে যুক্ত হয়ে বর্তমানে ১১টি বড় এবং ৮টি ছোট ফেরিসহ মোট ১৯টি ফেরি চলাচল করছে। এ ছাড়া যানবাহন বাড়ার সঙ্গে ফেরির ট্রিপ সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।
ঘাটের অতিরিক্ত গাড়ির চাপের বিষয়ে তিনি বলেন, সপ্তাহের সাধারণত শুক্রবার ও শনিবার একটু বেশিই চাপ থাকে। এ ছাড়া বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া নৌপথ প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ থাকায় ওই রুটের গাড়ি এ ঘাট দিয়ে পার হচ্ছে। যে কারণে চাপ পড়ছে। তবে স্বাভাবিক সময়ে শুধু দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৯৪ থেকে ২০০টির মতো ট্রিপ দেয়। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া থেকে ২৫৩টি ফেরি ট্রিপ দিয়েছে। যানবাহনের যেমন চাপ বেড়েছে, তেমনি ট্রিপ সংখ্যাও বেড়েছে।