রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় ঢাকামুখী যানবাহনের লম্বা লাইন।
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় ঢাকামুখী যানবাহনের লম্বা লাইন।

দৌলতদিয়ায় ঢাকামুখী যান ও যাত্রীর চাপ বেড়েছে

করোনা সংক্রমণরোধে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের ষষ্ঠ দিনে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকামুখী যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা বিভিন্ন ধরনের পণ্যবাহী গাড়ি আসতে থাকায় পারাপারের জন্য লম্বা লাইন তৈরি হয়। একই সঙ্গে কয়েক দিনের তুলনায় ঢাকামুখী যাত্রীদেরও বেশি দেখা যায়।

আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ৫টি ফেরিঘাটের অধিকাংশ ঘাট ফেরিশূন্য থাকছে। যে ঘাটে ফেরি ভিড়ছে, সে ঘাটেই যাত্রীরা ভিড় করছেন। ঢাকামুখী পণ্যবাহী গাড়ির সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি গাড়িসহ মোটরসাইকেল পার হতে দেখা যায়। বিপরীত দিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা ফেরিগুলোতেও দক্ষিণাঞ্চলগামী যানবাহনবোঝাই, সঙ্গে কিছুসংখ্যক যাত্রী আসতে দেখা যায়।

ঢাকার ধামরাই থেকে ছোট ছেলেকে সঙ্গে করে বাইসাইকেল চালিয়ে গোয়ালন্দের দুদুখান পাড়ায় বাড়িতে ফিরছেন ফিরোজ শেখ। বেলা ১১টার দিকে দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। এক সপ্তাহের লকডাউন থাকায় প্রতিষ্ঠানটি ভেবেছিল পরে খুলবে। কিন্তু গতকাল ফের লকডাউন বাড়িয়ে দেওয়ায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়ি চলে যেতে বলেছে। সকালেই ছেলেকে নিয়ে ৪২ কিলোমিটার বাইসাইকেল চালিয়ে আসলাম।’

ঝিনাইদহ থেকে কচুবোঝাই করে সিলেট যাচ্ছেন ট্রাকচালক আকাশ রায়। ফেরির জন্য লম্বা লাইনে আটকে থাকা অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘খুব ভোরে রওনা করেছি। সকাল আটটার দিকে ঘাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে তিন ঘণ্টা ধরে আটকে আছি। এ রকম অর্ধশতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি ফেরিতে ওঠার অপেক্ষায় আছে।’

রাজবাড়ী থেকে অসুস্থ প্রতিবন্ধী মেয়ের চিকিৎসা করাতে ঢাকায় যাচ্ছেন গৃহবধূ লাইলী বেগম। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি মেয়েকে কোলে নিয়ে ফেরিতে ওঠার চেষ্টা করছিলেন। ঘাটে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘মেয়ে খুব অসুস্থ। বাবা নেই। তাই নিজেই কোলে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। রাজবাড়ী থেকে অটো রিজার্ভ করে ঘাটে আইছি। অহন নদী পাড়ি দিতে পারলে পাটুরিয়া থেকে যেভাবেই হোক ঢাকা যেতে হবে।’

দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছেন ঢাকাগামী অ্যাম্বুলেন্সচালক মোস্তাক আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘সাভারের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রোগীকে আনতে পরিবারের লোকজন যাচ্ছে। ঘাটে এসে ফেরি না পেয়ে পন্টুনে দাঁড়িয়ে আছি।’

এ ছাড়া ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া তেমন কোনো যানবাহন দেখা যায়নি। মাঝেমধ্যে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দেখা গেলেও পুলিশের বাধার মুখে পড়ছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ক্যানালঘাট এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়। অটোরিকশা থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে অটোরিকশা ঘুরিয়ে দিতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবদুস সাত্তার বলেন, যানবাহনের চাপ কম থাকায় সীমিত পরিসরে ছোট-বড় মিলে রোস্টারমাফিক ৯টি ফেরি চালানো হচ্ছে। প্রয়োজনে ফেরি বাড়ানো হবে।