রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় উভয় দিকের যানবাহনের চাপ পড়ছে। এতে মাঝেমধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ঘাট এলাকার প্রধান সড়ক। বিশেষ করে রাজধানী থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনের চাপ বেশি রয়েছে। এ অবস্থায় প্রচণ্ড গরমের মধ্যে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ফেরি পারাপারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ঢাকামুখী বিভিন্ন পরিবহনের কর্মী ও যাত্রীদের।
মাত্র ৩০ মিনিটের নৌপথ পাড়ি দিতে পণ্যবাহী গাড়িগুলোকে ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আর দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও জরুরি পচনশীল পণ্যের গাড়িগুলো সাধারণত ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার আগে ফেরিতে উঠতে পারছে না।
রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ ফিডমিল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সারিতে ফেরির জন্য অপেক্ষায় আছে কয়েক শ পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। আর ঘাট থেকে মহাসড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত পণ্যবাহী গাড়ির সঙ্গে রয়েছে যাত্রীবাহী বাসের সারি। এর মধ্যে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ের পর থেকে গোয়ালন্দের দিকে বাংলাদেশ হ্যাচারি পর্যন্ত মহাসড়কে যানবাহনের তিন-চার লাইন তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয় সূত্র জানায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ১৯টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে দুই দিন ধরে একটি বড় ও আরেকটি ছোট ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পাটুরিয়ার ভাসমান কারখানা মধুমতীতে মেরামতে রয়েছে। বাকি ১৭টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এ ছাড়া শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় গাড়ির চাপ বেড়েছে। ঈদের সময় বাড়তি ঝঞ্ঝাট এড়াতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেকে এখনই রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে। এ কারণে পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন ও যাত্রীর ভিড় বাড়ছে।
ঘাট-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরিগুলো ২০৬ বার বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে পাটুরিয়ায় পৌঁছেছে। এই সময়ে ৬১৫টি যাত্রীবাহী বাস, ১ হাজার ২৮১টি ট্রাক, ১ হাজার ৮৩১টি ছোট বা ব্যক্তিগত গাড়ি পার করা হয়েছে।
ঘাট এলাকার মহাসড়কে যানবাহনের শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজ করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আবদুল খালেক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চালকেরা কেউ কারও কথা শুনতে চান না। যে যাঁর মতো করে বেপরোয়াভাবে চলাচল করায় মাঝেমধ্যে এমন যানজট তৈরি হচ্ছে।
খুলনা থেকে আসা চালবোঝাই ট্রাকের চালক শহিদুল ইসলাম শনিবার রাত ১১টার দিকে দৌলতদিয়া ইউপি কার্যালয়ের সামনে এসে আটকা পড়েন। তিনি বলেন, প্রায় ১৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো ঘাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পেছনে পড়ে আছেন। গরমে একটু পরপর পানি পান করছেন। তা-ও অতিষ্ঠ অবস্থা।
শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ঘাট এলাকায় উভয় দিকের গাড়ির চাপ রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে ফেরি ও ঘাটসংকট। মাত্র চারটি ঘাট দিয়ে এত গাড়ি পার করায় এমন যানজট লেগেছে। মাত্র আধা ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে ১৫-১৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
ঝিনাইদহ থেকে আসা একটি দূরপাল্লার একটি বাসের যাত্রী ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে বাসে বসে আছি। প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। জরুরি কাজের জন্য ঢাকায় যাচ্ছি। কখন যে নদী পার হব, তা বলতে পারছি না।’
১৯টি ফেরির মধ্যে দুটি মেরামতে থাকায় এবং ঘাটসংকটের কারণে যানবাহনের চাপ তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শিহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। আমরা ভোগান্তি ও যানজট কমাতে সর্বক্ষণ চেষ্টা করছি।’