ফেরি দুর্ঘটনার জেরে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় আটকে আছে পণ্যবাহী গাড়ি। ফেরিডুবির পাশাপাশি ফেরি ও ঘাটস্বল্পতা, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়ায় ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের প্রায় চার কিলোমিটার এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় আছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। তবে এর মধ্যে পণ্যবাহী যানবাহনের সংখ্যাই বেশি। ফেরির নাগাল পেতে প্রতিটি পণ্যবাহী গাড়িকে ১৫ থেকে ১৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে যাত্রীবাহী বাস ও কাঁচামালের গাড়িকে তিন থেকে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
খুলনার পাইকগাছা থেকে গতকাল বুধবার দুপুরে শ্রমিকদের নিয়ে মানিকগঞ্জের উদ্দেশে রওনা করেন গাড়িচালক আবদুর রহিম। বেলা দুইটার দিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পেছনে গোয়ালন্দের ফিডস মিল এলাকায় তাঁদের গাড়ি আটকা পড়ে। তিনি আজ বলেন, ‘প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে আটকে আছি। ফেরিতে উঠতে আরও ঘণ্টা দুই অপেক্ষা করতে হতে পারে।’
লম্বা লাইনে আটকে থাকা অধিকাংশ গাড়িচালক ও সহকারীকে দীর্ঘ যানজটের কারণে গাড়ির ভেতরেই ঘুমাতে দেখা যায়। চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকামুখী গাড়িগুলোর ফেরিঘাটের দিকে এক কিলোমিটার যেতে তিন ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। মহাসড়কের পাশে খাওয়াদাওয়া ও টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাড়তি ভোগান্তিতে পড়ছেন তাঁরা। গাড়ি ছেড়ে বাইরে অন্য কোথাও যেতেও পারছেন না বলে জানান তাঁরা।
খড়বোঝাই ট্রাক নিয়ে ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন চালক মো. আবদুল্লাহ। তিনি গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে গোয়ালন্দ মোড়ে এসে সিরিয়ালে আটকা পড়েন। সেখান থেকে গতকাল সকাল ছয়টার দিকে ঘাটের দিকে আসেন। গতকাল বেলা দেড়টার দিকে তিনি ঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ছিলেন। অর্থাৎ, প্রায় ১১ ঘণ্টা সিরিয়ালে থেকেও ফেরির দেখা পাননি তিনি। ফেরি পেতে আরও ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা লাগবে বলে জানান ওই ট্রাকচালক।
বেনাপোল থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রাকের চালক আলামিন বলেন, গতকাল বিকেল পাঁচটায় তিনি ঘাট এলাকায় আসেন। প্রায় ১০ ঘণ্টায় তিনি ঘাট এলাকার কফিলউদ্দিন ফিলিং স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘এটা কোনো ব্যবস্থা হলো! এখন আর কুলাতে পারছি না। ফেরিতে উঠতে আর কয় ঘণ্টা সময় লাগবে, সেটাই ভাবছি। আমার পেছনে আরও কয়েক শ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান আটকা আছে। যাত্রীবাহী বাসও আছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. জামাল হোসেন বলেন, ফেরি পর্যাপ্ত থাকলেও একটি ডুবে যাওয়ায় পাটুরিয়া এলাকায় একটি ঘাট বন্ধ আছে। আবার বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথের যানবাহন দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ ব্যবহার করায় গাড়ির বাড়তি চাপ পড়ছে। দৌলতদিয়ার পাঁচটি ঘাটের মধ্যে ৫ ও ৭ নম্বরের পরে ৩ নম্বর ফেরিঘাট বড় করা হলেও তেমন সুবিধা হচ্ছে না। বড় ফেরির জন্য বড় পন্টুন বসানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও একটি বড় পন্টুন বসলে সমস্যা কিছুটা কমবে।
বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (মেরিন) আবদুস সাত্তার বলেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে বড় ৮টি, ছোট ৬টি এবং ২টি মাঝারি আকারের মোট ১৬টি ফেরি চালু আছে।