কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বাংলাদেশে খাদ্যসংকট নেই। এ দেশে এখন আর কেউ না খেয়ে মারা যায় না। অনেকে ভিজিএফের মোটা চাল বিক্রি করে সরু চাল কেনে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নাটোর সদর উপজেলার খোলাবাড়িয়া ঔষধি গ্রাম পরিদর্শন শেষে ভেষজ চাষিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মন্ত্রী এ কথা বলেন।
মতবিনিময় সভায় কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘১৫ বছর আগেও দেশে খাদ্যসংকট প্রকট ছিল। আমরা কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধার অনেক এলাকায় ত্রাণ দিতে গিয়েছি। লঙ্গরখানা খুলেছি। ওই সব এলাকার মানুষ খাবার পেত না। তখন এক বিঘা জমিতে আউশ ধান হতো দুই থেকে তিন মণ। আমন হতো ছয় থেকে সাত মণ। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার কৃষিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এখন বাংলাদেশে খাদ্যসংকট নেই। এ দেশে এখন আর কেউ না খেয়ে মারা যায় না। অনেকে ভিজিএফের মোটা চাল বিক্রি করে সরু চাল কেনেন। আমাদের বিজ্ঞানীরা উন্নত জাতের খাদ্যশস্য উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন প্রতি বিঘায় ২০ মণের অধিক ধান উৎপাদিত হচ্ছে।’
কুড়িগ্রাম ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন গ্রমের উদাহরণ দিয়ে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কুড়িগ্রাম ও টাঙ্গাইলের গ্রামে বিউটি পারলার গড়ে উঠেছে। এমনকি গ্রামের হাটবাজারের কোনো কোনো এলাকাকে পারলার গলিও বলা হয়। অথচ ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের উন্নয়ন দেখেন না। তাঁরা কথায় কথায় সরকারকে হুমকি দিচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল। ২০১৫ সালে ৯২ দিন হরতাল–অবরোধ করেছে। ১৫০ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এটা কি গণতন্ত্র? এটা কি মানুষের অধিকার? সন্ত্রাস করে, মানুষ পুড়িয়ে গণতন্ত্র কায়েম করা যায় না।
খোলাবাড়িয়া ঔষধি গ্রামের চাষিদের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের উন্নয়নে বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তেমনি আপনারাও (কৃষকেরাও) একেকজন বিজ্ঞানী। আমি আমেরিকা থেকে ডক্টরেট করে এসেছি। কিন্তু খোলাবাড়িয়া ঔষধি গ্রামের ভেষজ চাষি জয়নালের ভেষজ গাছগাছড়ার মিউজিয়াম (জাদুঘর) দেখে বিস্মিত হয়েছি, অভিভূত হয়েছি। তিনি নিজের চেষ্টায় প্রায় ৬০০ জাতের ভেষজ গাছের চারা উৎপাদন করেছেন। এটা অনেক বড় একটা সাফল্য। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই গ্রামের কৃষিবিপ্লব নিয়ে প্রতিবেদন জমা দেব। ঔষধি গ্রামে একটি হিমাগার প্রতিষ্ঠা ও চাষিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তির সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করব।’
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম, নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম, রত্না আহম্মেদ (সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য), বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য (গাইবান্ধা) উম্মে কুলসুম, হোসনেয়ারা বেগম (জামালপুর), শামীমা আক্তার খানম (সুনামগঞ্জ) কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মহাপরিচালক বেনজীর আহম্মেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, ভেষজ চাষি আলী আকবর, হাসিবুর রহমান প্রমুখ।
মতবিনিময় সভা শুরুর আগে মন্ত্রী ঔষধি গ্রামের কয়েকটি বাগান ও নার্সারি ঘুরে দেখেন। তিনি খেতে কর্মরত শ্রমিক ও চাষিদের সঙ্গে তাঁদের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। এ সময় চাষিরা ওই গ্রামে ভেষজ গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা, ভেষজ মার্কেট চালু, হিমাগার নির্মাণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের দাবি জানান।