জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতা থেকে হটানোর মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। তিনি বলেন, ১৯৯১–এর পর থেকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখন দেশে স্বৈরশাসন চলছে।
ফেনী শহরের একটি গণমিলনায়তনে আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন দলটির চেয়ারম্যান। তাঁর মতে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে চরিত্রগত কোনো পার্থক্য নেই। দুই দলই জনবিচ্ছিন্ন, তারা নিজেদের কথা চিন্তা করে। জনগণের কথা চিন্তা করে না।
যাঁরা জাতীয় পার্টিকে স্বৈরশাসকের দল বলে থাকেন, তাঁদের কাছে প্রশ্ন রেখে জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি স্বৈরশাসন করলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কী করছে? জাতীয় পার্টির ওপর প্রতিনিয়ত মানুষের আস্থা বাড়ছে, জাতীয় পার্টির প্রতি মানুষের প্রত্যাশা দেখা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট এরশাদ যত আসনে নির্বাচন করেছেন, সব আসনেই জনগণের ভোটে জয়লাভ করেছেন।
জি এম কাদের আরও বলেন, ‘আমরা বিরোধী দল হলেও জনগণ আমাদের ওভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। এটারও বাস্তবতা আছে। আগামীর সরকার হবে জাতীয় পার্টির সরকার। সরকারি দল প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচন করবে। এটা ভুলে যেতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের আস্থার সংকট রয়েছে। তেমনি রয়েছে বিএনপির প্রতিও। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছে। তাঁর নাম মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এ দেশে যত দিন জাতীয় পার্টির উন্নয়ন থাকবে, তত দিন এরশাদ মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ভাষ্যমতে, বর্তমান সরকার দেশের মধ্যে বিভেদ তৈরি করেছে। স্বাধীনতার চেতনাকে ব্যবহার করেই এ চেতনাকে ধ্বংস করছে। দেশের মানুষের স্বপ্ন ছিল দেশের মালিক হবে জনগণ, এখন সেই দেশে জনগণের অবস্থান কোথায়। আওয়ামী লীগ একবার ও বিএনপি চারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দেশ স্বাধীন হলেও বৈষম্য থেকে মুক্তি পায়নি। দেশে দুর্নীতি চরমভাবে বিস্তার করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। মানুষের আয় কমে যাচ্ছে। বেকার সমস্যা বাড়ছে। গণতন্ত্র না থাকলে দেশে দুর্নীতি হয়।
জাতীয় পার্টি সহিংসতার রাজনীতি করে না জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, জনগণের ইচ্ছার ওপর সবকিছু হবে। সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে। জাতীয় পার্টির ওপর মানুষের আশাভরসা বাড়ছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে বিএনপি। দেশের মানুষ তৃতীয় শক্তি খুঁজছে। আর সেটা হবে জাতীয় পার্টি।
সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেনী জেলা জাতীয় পার্টির উপদেষ্টা, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফেনী আসনের সাংসদ লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ এমন একটি সরকার চায়, যারা জনগণের কথা বলবে। বর্তমান সরকার মানুষের ওপর নানাভাবে নিষ্পেষণ করছে। সরকারি দলের এমপি-মন্ত্রীরা দুর্নীতিতে লিপ্ত। এভাবে দুর্নীতিতে শাসকেরা জড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?’
স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ফেনী জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোতাহের হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ–ইনু) সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-১ আসনের সাংসদ শিরীন আখতার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব ও প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম, সাইদুর রহমান, সাংসদ লেয়াকত হোসেন এবং সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাজমা আক্তার, জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ফেনী জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোতাহের হোসেনকে সভাপতি ও জহির উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করেন। তিনি ১৫ দিনের মধ্যে তাঁদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেন।