একটু ভালো রোজগারের আশায় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পেন্নাই গ্রামের শাকিল মিয়া গিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। মাত্র দুই বছর। এর মধ্যে পোড়া লাশ হয়ে ফিরছেন দেশে।
শাকিল মিয়া (২২) রেখে গেছেন স্ত্রী ও দেড় বছরের এক মেয়েকে। পরিবারে আছেন মা-বাবা, দুই ভাই ও এক বোন। শাকিলের পরিবারজুড়ে এখন কেবলই কান্নার রোল। পরিবারটির ওপর রয়েছে ঋণের বোঝা।
স্বজনেরা জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের নিকটবর্তী পামব্রিজ (কেতলেহং) এলাকায় গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) আসরের নামাজের পর একদল সন্ত্রাসী শাকিলের দোকানে ঢোকে। তাঁকে বেধড়ক প্রহার করে। দোকানটিতে লুটপাট চালায়। পরে শাকিলকে ভেতরে রেখেই পেট্রল ঢেলে দোকানঘরটিতে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলাকারীরা চলে যায়। স্থানীয় লোকজন শাকিলকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বুধবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাকিলের মৃত্যু হয়। ২৫ জানুয়ারি শনিবার আসরের নামাজের পর শাকিলের লাশ পেন্নাই গ্রামে পৌঁছার কথা।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় শাকিলের বাড়িতে পৌঁছালে দেখা যায়, গোটা বাড়িই শোকে স্তব্ধ। দেড় বছরের মেয়েকে কোলে নিয়ে শাকিলের স্ত্রী শান্তা আক্তার বিলাপ করছেন। বাবা হোসেন মিয়া কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। মা সামছুন নাহার, একমাত্র বোন লিপি আক্তার ও খালা বিউটি আক্তার অঝোরে কাঁদছেন।
শান্তা আক্তারের প্রশ্ন, কে টানবে ৯ লাখ টাকার ঋণের বোঝা? কে দেখবে তাঁর একমাত্র মেয়েকে? দেশে থাকতে বিআরটিসি বাসের সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি করে যা পেতেন, তা দিয়েই সংসার চলত। এরপর শান্তা একটু থামেন। এরপর আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
>কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পেন্নাই গ্রামের শাকিল মিয়াকে দুর্বৃত্তরা আগুনে পোড়ায় সোমবার
বুধবার হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর
শাকিলের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তাঁদের কোনো জায়গাজমি নেই। পারিবারিক আয় ও স্বজনদের দয়ায় ৭ লাখ টাকায় শাকিল দক্ষিণ আফ্রিকা যান। সেখানে পৌঁছার পর দোকান কেনার জন্য সুদ আর বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নেন। বাড়ি থেকে ৯ লাখ টাকা আবার পাঠাতে হয়। হোসেন মিয়ার চার সন্তানের মধ্যে শাকিল সবার ছোট। শাকিলের বড় ভাই সোহেল মালয়েশিয়ায় এবং মেজো ভাই শরীফ মিয়া দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে, খেয়ে না-খেয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। মা-বাবা আর স্ত্রী ভেবেছিলেন বিদেশে ব্যবসা করে শাকিল তাঁদের অভাব–অনটন দূর করবেন।
শাকিলের বাবা হোসেন মিয়া বলেন, ‘যখন যে কাজ পাই, সে কাজ করে পরিবার চালাই। তার ওপর ঋণের বোঝা। কী করব বুঝতে পারছি না!’
শাকিলের মা সামছুন নাহার বলেন, মাসিক পাঁচ হাজার টাকা সুদে চার লাখ টাকা, এনজিও থেকে কিস্তিতে শোধ করবেন বলে দুই লাখ টাকা এবং স্বজনদের কাছ থেকে তিন লাখ টাকার ঋণ রয়ে গেছে।
শাকিলের স্ত্রী শান্তা আক্তার বলেন, মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় শাকিলের। তিনি বলেছিলেন, তাঁর ব্যবসা করতে খুবই ভয় লাগে। ঋণ শোধ হয়ে গেলে দেশে ফিরে আসবেন। আবার বাসের সুপারভাইজারের চাকরিতে যোগ দেবেন। ফিরে আসছেন তিনি ঠিকই, কিন্তু পোড়া লাশ হয়ে।