শহররক্ষা বাঁধের ঢালে সারি সারি শিশু যেন লাশ হয়ে পড়ে আছে, যেভাবে এই এলাকার মানুষ এই জায়গায় একাত্তরে লাশ হয়ে পড়ে ছিল। সারা দেশের বধ্যভূমিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে গতকাল শনিবার রাজশাহী নগরের হাদির মোড় এলাকায় খেলাঘরের জেলা শাখার শিশুরা এই প্রতীকী বধ্যভূমি তৈরি করেছিল।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠান চলে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। যতক্ষণ অনুষ্ঠান চলে, ততক্ষণ মাইকে বাজানো হচ্ছিল একাত্তরের স্বজন হারানোদের হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানো সব গান আর কবিতা। ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে/ কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে...।’ বাঁধের ঢালে শিশুদের প্রতীকী লাশ হওয়ার অভিনয়ের দর্শক ছিলেন শুধুই পথচলা মানুষ।
আয়োজকেরা জানান, ১৯৭১ সালে নগরের এই এলাকায় অসংখ্য মানুষকে ধরে নিয়ে এসে হত্যা করা হয়। বিশেষ করে নগরের হাদির মোড় থেকে কেদুরমোড় পর্যন্ত এলাকায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এখন পর্যন্ত এই এলাকাকে বধ্যভূমির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। একইভাবে নগরের শ্রীরামপুর এলাকার বাবলাবনে গণহত্যা হয়। ১৯৯৫ সাল থেকে খেলাঘর রাজশাহীতে বাবলাবন বধ্যভূমিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে আসছে। ২০১৭ সাল থেকে হাদির মোড়কেও তার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
প্রতীকী বধ্যভূমিতে খেলাঘরের ৩৫ জন সদস্য লাশের ভূমিকায় অভিনয় করে। একই সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠান চলে। এতে সভাপতিত্ব করেন মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার আবদুল মান্নান। প্রতীকী বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বক্তব্য দেন বধ্যভূমি বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আরশেদ আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার আবদুস সালাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির রাজশাহীর জেলা শাখার সভাপতি এনামুল হক। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন খেলাঘরের সাধারণ সম্পাদক আফতাব হোসেন।
এ ছাড়া দিবসের প্রথম প্রহরে রাজশাহী মহানগরীর ভুবনমোহন পার্ক শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা।