সব প্রজাতির উদ্ভিদই বিপন্নের তালিকায় রয়েছে। ২০১৬ সালে এসব উদ্ভিদের চারা সংগ্রহ করে তা একটি সুনির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করে বাঁচিয়ে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেসব চারা এখন পরিপূর্ণ গাছে পরিণত হয়েছে। বিচিত্র আর দুর্লভ জাতের উদ্ভিদের এই উদ্যান সিলেট এমসি কলেজে।
কলেজের একাডেমিক ভবনের ঠিক পাশেই ‘বিপন্ন উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্নার’ নামের এই উদ্যান গড়ে তোলা হয়েছে। ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ উদ্যানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। বিপন্ন উদ্ভিদ সংরক্ষণ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ও সিলেট এমসি কলেজের উদ্যোগে এ উদ্যান প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই কলেজের ব্যবস্থাপনায় এটি দিনে দিনে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে।
প্রায় সাত শতক জমিতে গড়ে তোলা এই উদ্যানে চেনা-অচেনা মোট ৪০ প্রজাতির বিপন্ন উদ্ভিদের চারা রোপণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১২ প্রজাতির চারা মারা গেছে। বাকি ২৮ প্রজাতির উদ্ভিদ বেঁচে আছে। এর মধ্য তালিপাম, হৈমন্তী, মুচকুন্দ, তমাল, নাক্স ভমিকা, তুন, কফি, অশোক, তেলসুর, কইনার, বাঁশপাতা, রক্তন, ধুলিয়া গর্জন, কাঠলিচু, সোনালু, উদাল, দোফলা বেল, তেলিয়া গর্জন, সাতকরা, কানাইডিঙ্গা, দেশি গাব, রক্ত চন্দন, তৈকর ও বুদ্ধ নারকেল অন্যতম।
সিলেট এমসি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল খালেক বলেন, ‘বিপন্ন উদ্ভিদ সংরক্ষণ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিপন্ন উদ্ভিদের চারাগুলো আমাদের সরবরাহ করা হয়েছিল। এ বিপন্ন উদ্ভিদগুলোও এখানে বেড়ে উঠছে। এ উদ্যানটি বিপন্ন উদ্ভিদের একটি চমৎকার সংগ্রহশালা। কলেজ প্রশাসন সরাসরি এ উদ্যানের দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।’
কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, নানা প্রজাতির উদ্ভিদ উদ্যানটিকে বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে। দুর্লভ ও বিপন্ন প্রজাতির আকর্ষণীয় সব উদ্ভিদের সংগ্রহ শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বিকশিত করছে। বিশেষত উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য এ উদ্যান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে উদ্যানে আরও প্রচুর পরিমাণে বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদের সমাহার ঘটাতে পারলে এটি একটি অনন্য উদ্যান হিসেবে পরিচিতি পাবে। তবে উদ্যানটি নিয়মিত পরিচর্যা করা হয় না বলে কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘সংগ্রহশালাটি দুর্লভ হলেও এটি রক্ষণাবেক্ষণে কলেজ প্রশাসনের আন্তরিকতা সেভাবে চোখে পড়ে না। অনেকটা দায়হীনভাবে বিপন্ন উদ্ভিদগুলো বড় হচ্ছে। পরিচর্যার অভাবে অনেক চারা এরই মধ্যে মারা গেছে। অথচ সঠিক যত্ন পেলে এসব চারা টিকে যেতে পারত। এ ছাড়া একটু নজরদারি বাড়ালে আরও বিপন্ন উদ্ভিদের সংগ্রহ এখানে বাড়ানো যেতে পারে।’
এই বিষয়ে সিলেট এমসি কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিপন্ন উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্নারে আরও বিপন্ন গাছের চারা রোপণে উদ্যোগ নেওয়া হবে। এটি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ দেখভাল করে থাকে। কর্নারটির ব্যবস্থাপনা যেন ঠিক থাকে, এ জন্য উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবার বলা হবে।’