ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পানিবন্দী অবস্থায় অসহায় জীবন যাপন করছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দারা। যেদিকে চোখ যায়, শুধু পানি আর পানি। এর মধ্যেই খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট নিয়ে হাজির প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা।
উপহার হিসেবে এই খাদ্যসামগ্রী পেয়ে নেবুবুনিয়া গ্রামের বাবুরালী (৬৩) বলেন, ‘দুর্যোগ হলি প্রথম আলো আমাগে এদিক আসে, কিছু দে যায়। কদিন খাতি পারি। তা তুমরা একটু দয়া করো না, যাতে স্থায়ী বাঁধ হয়। আমরা আর পারতিছিনে। বছর বছর ঘরদোর সব ডুবে যায়। এভাবি কি ব্যাঁচি থাকা যায় কও।’
প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আজ শুক্রবার শ্যামনগরের গাবুরা ও বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে বাবুরালীর মতো ২১০টি পরিবারের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। দুর্যোগের সময় এমন সহায়তা পেয়ে কিছুটা হলেও হাসি ফুটেছে দুর্গত এলাকার মানুষের মুখে। সুন্দরবনসংলগ্ন ডুমুরিয়া গ্রামের ৭৩ বছরের করিমুন্নেছা বলেন, ‘আমাগে ঘরবাড়ি সব ডুবে গে। ওয়াপদার ভেড়ির ওপর নেইছি। বর্ষা হলি ভিজে যাতি হয়। আনগা এদিক কেউ আসে না। প্রতিবন্ধী খুকিডারে নে খুব অসহায়ের মধ্যি দিন যেতিছে। এ সময় তোমাগে এ খাবার কদিন খাতি পাবানে।’
সাতক্ষীরা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনসংলগ্ন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ গাবুরা। ত্রাণ দিতে ট্রলারে করে বন্ধুসভার সদস্যরা প্রমত্তা খোলপেটুয়া নদী পেরিয়ে আজ শুক্রবার সকালে গাবুরার ডুমুরিয়ায় পৌঁছায়। গাবুরা দ্বীপের ১৯টি গ্রামের লোকসংখ্যা ৪২ হাজার। বছর বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ ইউনিয়নের মানুষ সর্বশান্ত হয়ে পড়ে। সবারই অবস্থা নুন আনতে পান্তা ফুরায়ের মতো। এখানকার ৩টি গ্রামের ১১০টি পরিবারকে প্রথম আলো ট্রাস্ট্রের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়।
এর আগে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চারটি গ্রামের ১০০টি পরিবারকেও ত্রাণ দেওয়া হয়। দাতিনাখালী গ্রামের সবুর আলী গাইন (৮০) বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। কাজ নেই এলাকায়। এ সময় তোমাদের খাবার পেয়ে খুব ভালো হবে। এলাকার মানুষের আর্তি—যত দিন অবস্থা স্বাভাবিক না হয়, খাবারের ব্যবস্থা করা হোক, বাঁধ দেওয়া হোক, যেন বছর বছর ডুবতে না হয়।’
এর আগে ১ ও ২ মে প্রথম আলো বন্ধুসভার একদল সদস্য সাতক্ষীরা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে বুড়িগোয়ালিনী গিয়ে সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা করেন। একইভাবে তাঁরা যান গাবুরাতে। সেখানে কোমরসমান পানি ঠেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে এই তালিকা তৈরি করেন।
শ্যামনগর কলবাড়ি বালিরমাঠ এলাকায় শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাতে ত্রাণ তুলে দেন শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি বিশ্বাস। তিনি বলেন, প্রথম আলো সমাজে আলো ছড়ায়। যেকোনো দুর্যোগে প্রথম আলো অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। প্রথম আলো শুধু সংবাদ পরিবেশন করার মধ্যে তাদের সীমাবদ্ধ রাখেনি। মানবকল্যাণে কাজ করে আসছে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আমানুল্যাহ।
গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাতে ত্রাণ তুলে দেন মোজাহার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শম্পা গোস্বামী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন শিক্ষক তাজুল ইসলাম।
ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেন প্রথম আলোর সাতক্ষীরা বন্ধুসভার সভাপতি মরিয়াম কেয়া, সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাহাতুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, দপ্তর সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, অনুষ্ঠান সম্পাদক শফিউল আলম, বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ইমরুল হাসান, সদস্য তরিকুল ইসলাম, রেজওয়ান, উপদেষ্টা জাহিদা জাহান ও প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন।
হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল
হিসাব নম্বর: ২০৭ ২০০ ১১১৯৪
ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা।