মাদারীপুরের শিবচরে দুই শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে শিবচর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেছে ওই শিশুদের পরিবার। এদিকে এর আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সালিস বৈঠকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করে এ ঘটনার মীমাংসা করে দিয়েছিলেন।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শিবচর উপজেলার উত্তর বহেরাতলা ইউনিয়নের একটি গ্রামে প্রায় এক মাস আগে ১০ বছরের ২ মেয়েশিশুকে জাম্বুরা খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে ঘরে নিয়ে যৌন নির্যাতন করেন আকমান মাদবর (৫০)। এ ঘটনায় জানাজানি হলে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে উত্তর বহেরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন ওরফে হায়দার হাওলাদার যৌন নির্যাতনের শিকার ওই শিশুদের বাড়ির উঠানে এক সালিস বৈঠক করেন।
সালিসে অভিযুক্ত আকমান মাতবরকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া সালিসে ১০টি বেত্রাঘাত ও কিলঘুষি দিয়ে তাঁকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন এলাকায় খুব প্রভাবশালী। তিনি শিবচর পৌরসভার বর্তমান মেয়র আওলাদ খানের ভাগনে এবং উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাহিমা খাতুনের বড় ভাই। তাই এলাকায় তাঁর আলাদা দাপট রয়েছে। স্থানীয় সব ঘটনার সালিস তিনিই করেন। দুই শিশুকে যৌন নির্যাতনের ঘটনার বিচারও তিনি করেছেন এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জরিমানা করে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর থেকেই অভিযুক্ত আকমান এলাকায় নেই।
নির্যাতনের শিকার একটি শিশুর মা বলেন, ‘ঘটনা জানাজানি হলে চেয়ারম্যান ও তাঁদের লোকজন বাড়িতে এসে সালিস করেন। বাড়ির উঠানে অনুষ্ঠিত ওই সালিসে আকমানকে তিন লাখ টাকা জরিমানা ও মারধর করা হয়। জরিমানার টাকার দায়িত্ব চেয়ারম্যান নিলেও সালিস করার পর প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেলেও আমরা কোনো টাকাপয়সা পাইনি। শুধু সালিসই হইছে। বিচার পাইনি আমরা।’
দুই শিশুকে যৌন নির্যাতনের ঘটনা সালিসে মীমাংসা করার কথা স্বীকার করেন উত্তর বহেরাতলা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। এ বিষয়ে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকার মুরুব্বিরা এটার সালিস নিয়ে বসে। আমাকে তারা আসতে বললে আমি সেখানে যাই। আমার কাছে প্রথমে মেয়ের পরিবার এলে আমি তাদের থানায় যেতে বলি। কিন্তু তারা থানায় যায় না।’
তবে এ বিষয়ে শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিরাজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যৌন নির্যাতনের ঘটনা কখনো সালিস বৈঠকে মীমাংসা করা যায় না। এটি গুরুতর একটি অপরাধ। সম্প্রতি যৌন নির্যাতনের ঘটনা সালিসে মীমাংসা করার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে নির্যাতনের শিকার ওই দুই শিশুর অভিভাবকদের খবর দিয়ে আকমান মাদবরকে আসামিকে করে মামলা করানো হয়। আমরা আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি।’
শিবচর থানার ওসি মিরাজ হোসেন আরও বলেন, ‘এ ছাড়া মামলায় স্থানীয়ভাবে ইউপি চেয়ারম্যানের সালিসের কথা উল্লেখ করেন বাদী। আমরা চেয়ারম্যানের বিষয়টি তদন্ত করছি। তিনি যদি এ ঘটনার বিচার সরাসরি করে থাকেন, তাহলে তিনিও আসামি হবেন।’