সুনামগঞ্জে প্রতারণার মাধ্যমে দুই রোহিঙ্গার পাসপোর্ট করার চেষ্টা মামলায় সুনামগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর হোসেন আহমদ ওরফে রাসেলকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার তিনি জামিনের আবেদন করলে আদালতের বিচারক তাঁর আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। হোসেন আহমদ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১–এর দায়িত্বে আছেন।
কাউন্সিলর হোসেন আহমদকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন সুনামগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক সেলিম নেওয়াজ। ওই মামলায় ২০ জানুয়ারি পৌর মেয়র নাদের বখত, কাউন্সিলর হোসেন আহমদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য কাওসার আলমসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ২১ জানুয়ারি পৌর মেয়র নাদের বখত ও আইনজীবী কাওসার আলম আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাঁদের আবেদন মঞ্জুর করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলা পাসপোর্ট কার্যালয়ে নাম ও ঠিকানা পরিবর্তন করে প্রতারণার মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে আসেন দুই রোহিঙ্গা। তাঁদের মধ্যে একজন নারী ছিলেন। তাঁরা টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চার ব্যক্তির সহযোগিতায় সুনামগঞ্জে আসেন। ওই চার ব্যক্তি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। ওই দিন সকালে পাসপোর্ট করতে গিয়ে তাঁরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। বিকেলে আবার ছবি তোলা ও আঙুলের ছাপ দিতে পাসপোর্ট কার্যালয়ে গেলে কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। পরে দুই রোহিঙ্গা ও তাঁদের সহযোগী চার ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশে দেন পাসপোর্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
ওই দিনই প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার তেরানগর গ্রামের মো. ফরহাদ আহমদ (৩৬), রামনগর গ্রামের মো. নূর হোসেন (২৩), সুজাতপুর গ্রামের মো. জসিম উদ্দিন (২৪) ও আমির উদ্দিনকে (২৩) আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদার।
এর আগে ওই দুই রোহিঙ্গা সুনামগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপাড়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে স্থানীয় কাউন্সিলর হোসেন আহমদের সুপারিশে পৌরসভা থেকে জন্মসনদ নিয়েছিলেন। এ মামলায় গত ২১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এতে এজাহারভুক্ত চার আসামি ছাড়াও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকায় সুনামগঞ্জের কাউন্সিলর হোসেন আহমদ, পৌরসভার সহকারী কর আদায়কারী পীযূষ কান্তি তালুকদার, পৌরসভার জন্ম–মৃত্যুনিবন্ধক ও স্যানিটারি পরিদর্শক মো. সেলিম উদ্দিন, মেয়র নাদের বখত ও আইনজীবী কাওসার আলমকে যুক্ত করা হয়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলরসহ ওই কর্মকর্তারা যুক্ত রয়েছেন। পরে আইনজীবী কাওসার আলম সেটি সত্যায়ন করেছেন।
এ বিষয়ে মেয়র নাদের বখত বলেছেন, যে ঘটনায় তাঁকে মামলায় জড়ানো হয়েছে, সেটির সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যখন এসব সনদ দেওয়া হয়, তখন তিনি ঢাকায় ছিলেন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন কাউন্সিলর হোসেন আহমদ। তাই রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় তিনি কোনোভাবেই যুক্ত নন।