সকাল ১০টা! পদ্মার হিমশীতল বাতাস আর কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ। এর মধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের পদ্মার তীরে অপেক্ষা। নিরাপত্তাকর্মীদের ফাঁকি দিয়ে অনেকে ট্রলার ও স্পিডবোট নিয়ে নেমেছেন পদ্মা নদীতে। অনেকে সেতুর কাছাকাছি চরে অবস্থান করেছেন। সবাই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দুই প্রান্ত যুক্ত হওয়ার দৃশ্য দেখার অপেক্ষায়।
শরীয়তপুরের আঙ্গারিয়ার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো দেখতে। বাড়তি নিরাপত্তার কারণে যেতে পারবেন না সেতুর কাছে, এমনটা জানার পর মন খারাপ করে একটি ট্রলার ভাড়া করে পদ্মা নদীতে নেমেছেন।
৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে নদীর দুই প্রান্ত যুক্ত হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে আজ। এমন কর্মযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করতে পদ্মার পাড়ে ভিড় করেছেন হাজারো মানুষ। কিন্তু করোনার কারণে বাড়তি সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিয়েছেন প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাসদস্যরা প্রকল্প এলাকা ও পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানো পিলারের কাছে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছেন।
মনিরুজ্জামান বলেন, ‘২০১৭ সালে পদ্মার বুকে বসেছিল প্রথম স্প্যান। সেদিন তীরে দাঁড়িয়ে থেকে তা দেখেছি। আজও শেষ স্প্যান বসানো দেখতে এসেছি। অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সেতু নির্মাণ করতে হচ্ছে। এ কারণে এটা নিয়ে মানুষের আগ্রহ বেশি।’
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে পদ্মা সেতুর শেষ স্প্যান বসানো দেখতে এসেছেন নাদির হোসেন। স্প্যান বসানো দেখতে যাওয়ার জন্য তিনি শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে অপেক্ষা করছিলেন। সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য কাছে যেতে পারছি না। কিন্তু নদীর তীরে দাঁড়িয়েও যে আনন্দ লাগছে, তা বোঝাতে পারব না। আমরা অপেক্ষায় আছি সেতু ব্যবহার করে কবে ঢাকা থেকে বাড়ি পৌঁছাব।’
শরীয়তপুর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন মুন্সি বলেন, ‘যেদিন পদ্মার বুকে প্রথম স্প্যান বসেছিল, সেদিন সেটার সাক্ষী হয়েছিলাম। সেদিন খুবই আশাবাদী ছিলাম আমরা পারব, বিজয় আমাদের হবেই। আজ শেষ স্প্যান বসেছে। দুই প্রান্ত যুক্ত হয়েছে, বিজয়ের মাসে এমন স্বপ্ন বিজয় হবে ভাবতে পারিনি।’
সকাল ১০টার দিকে ভাসমান ক্রেনে করে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের কাছে আনা হয় ৪১তম স্প্যানটি। পিলারে উঠিয়ে স্প্যানটি বসানোর কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।