দুই পাড়ে উঠছে লাল পতাকা

নদীর মুখে বাঁধ দিয়েছে পাউবো। সেখানে মাছ চাষ করছেন এক পুলিশ সদস্য। সম্প্রতি যশোরের অভয়নগরের ভবানীপুর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

খননের পর যশোরের অভয়নগরের শ্রী নদীর দুই প্রান্তে আড়াআড়িভাবে দেওয়া হয়েছে মাটির বাঁধ। এক প্রান্তে ভবদহ ৯-ভেন্ট স্লুইসগেট। অপর প্রান্তে ভবানীপুর ত্রিমোহনা। জোয়ারের সঙ্গে আসা পলি ঠেকাতে এই বাঁধব্যবস্থা। বাঁধের অংশে নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬০০ মিটার। নদীর ওই অংশে থই থই করছে পানি। সেই পানিতে চাষ হয়েছে মাছ।

কেউ যাতে মাছ ধরতে না নামেন, সে জন্য নদীর দুই পাড়ে পুঁতে রাখা হয়েছে লাল পতাকা। নদীতে এই মাছ চাষের নেপথ্যে আছেন ভবদহ পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল মাহামুদ।

জোয়ারে পলি আসা বন্ধ করতে শ্রী নদীর মুখে বাঁধ দিয়েছে পাউবো। সেখানে মাছ ছেড়েছে ভবদহ ক্যাম্পের পুলিশ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, ভবদহ এলাকায় যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য গত বছর ৪৯ লাখ ২৩ হাজার টাকায় শ্রী নদীতে ১ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের পাইলট চ্যানেল খনন করা হয়। কিন্তু নদীর খনন করা অংশ পলিতে পুনরায় ভরাট হয়ে যায়। চলতি বছর ১৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় শ্রী নদীর ওই অংশের প্রায় ৬০০ মিটার খনন করা হয়। জোয়ারের সঙ্গে আসা পলিতে যাতে খনন করা অংশ ভরাট না হয়, সে জন্য ভবদহ ৯-ভেন্ট স্লুইসগেটের সামনে নদীর মুখে একটি এবং ভবানীপুর ত্রিমোহনা এলাকায় আরও একটি মাটির বাঁধ দেওয়া হয়। গত মে মাসে বাঁধ দুটি দেওয়া হয়।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির বলেন, পলিবাহিত নদী কেটে নদী রক্ষার যুক্তি অবৈজ্ঞানিক ও অর্থ লোপাটের ফন্দি ছাড়া কিছু নয়। নদী কেটে নদী বাঁচানো যায় না। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের পথে না গিয়ে সমস্যাকে জিইয়ে রেখে প্রতিবছর নদীতে পাইলট চ্যানেল খননের নামে অর্থ অপচয়, দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হয়েছে। ভবদহ স্লুইসগেটের ৯-ভেন্টের সামনে ৬০০ মিটার খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। কিন্তু এর কোনো কার্যকারিতা নেই। সেখানে মাছ চাষ করে ভবদহ ক্যাম্পের পুলিশ শুধু সুবিধা নিচ্ছে।

তবে মাছ চাষের বিষয়ে ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল মাহামুদ বলেন, ‘নদীতে মাছ ছাড়তে যাব কেন? সরকারি জায়গায় মাছ চাষ করা যায় নাকি? মাছের এক পোনা ব্যবসায়ীকে বলেছিলাম, নদীটি পড়ে রয়েছে কিছু মাছ সেখানে ফেলে দিতে। তিনি তিন-চার কেজি মাছ দিয়েছেন। আনন্দ করার জন্য উন্মুক্তভাবে নদীতে মাছ দেওয়া হয়েছে।’

তবে এলাকার কয়েকজন জানান, মূল শ্রী নদী বর্তমানে প্রায় মৃত। নদীতে তেমন কোনো জোয়ার–ভাটা হয় না। অথচ মূল শ্রী নদী থেকে শাখানদীতে যাতে পলি প্রবেশ করতে না পারে, এ জন্য কয়েক মাস আগে খননযন্ত্র দিয়ে নদীর ওই অংশে প্রায় ৬০০ মিটার খনন করে শাখানদীর দুই মুখে মাটি দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধ দেয় পাউবো। বৃষ্টির পানি জমে ভরে ওঠে নদীর ওই অংশে। সম্প্রতি ভবদহ পুলিশ ক্যাম্পের এসআই ইকবাল মাহামুদের নেতৃত্বে পুলিশ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছাড়ে নদীতে।

অভয়নগর উপজেলার কালিশাকুল গ্রামের অমল রায় বলেন, ভবদহ পুলিশ ক্যাম্প ওয়াপদার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নদীতে অনেক মাছ ছেড়েছে। কিছু মাছ ছোট। কিছু মাছ ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে। পুলিশই মাছের খাবার দেয়।

নদীতে পুলিশের মাছ চাষের বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবোর যশোরের কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, শ্রী নদী দিয়ে আসা পলি যাতে ঢুকতে না পারে, এ জন্য খনন করার পর শাখানদীর দুই মুখে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে নদীর ওই অংশ ভরে গেছে। সেখানে কারা মাছ চাষ করছেন, তা তিনি জানেন না। কেউ মাছ ছাড়ার অনুমতিও
নেয়নি। প্রয়োজন হওয়ামাত্রই বাঁধ কেটে দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে কেউ মাছ ছাড়ল কি ছাড়ল না, তা দেখা হবে না।