এসি ল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ

দুই নির্বাচনী কর্মকর্তাকে পিটিয়ে লাঠি ভেঙেছেন

পাটগ্রাম পৌর নির্বাচনে দুই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পেটানোর ঘটনায় বিচার চেয়ে মানববন্ধন। গতকাল বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনে একটি কেন্দ্রের দুই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে কক্ষে আটকে লাঠি দিয়ে বেদম পিটিয়েছেন কর্তব্যরত সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান। এ অভিযোগে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (ডিকেআইবি) গতকাল মঙ্গলবার মানববন্ধন করেছে। পাশাপাশি ওই কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সাবরিনা লাকীর বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিচার চেয়ে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন ওই দুই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

লাঞ্ছিত দুই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হলেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন ও মো. জালাল হোসেন। তাঁরা গত রোববার চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত পাটগ্রাম পৌর নির্বাচনে পাটগ্রাম সরকারি জসিমুদ্দিন কাজী আব্দুল গণি ডিগ্রি কলেজ ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন।

গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলা মোড়ে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে বক্তব্য দেন ডিকেআইবির লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি লতিফুল বারী ও উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জোহা খন্দকার। বক্তারা বলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার করতে হবে।

দুই কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রোববার পাটগ্রাম পৌরসভা নির্বাচনে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে পাটগ্রাম উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন ও মো. জালাল হোসেন নিজ ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ভোট গ্রহণ শেষে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাবরিনা লাকী নির্ধারিত ভোট গণনা কক্ষে তাঁরা ভোট গণনার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান তাঁদের ডেকে পাশের আরেকটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাঁদের অপেক্ষা করতে বলেন। এর কিছুক্ষণ পরে ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান আবারও কক্ষে প্রবেশ করে কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করেই ওই দুই সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে নিজ হাতে বেধড়ক মারপিট শুরু করেন।

মারপিটের একপর্যায়ে লাঠি ভেঙে যাওয়ায় বাইরে অবস্থানরত বিজিবি সদস্যের হাত থেকে আরও একটি লাঠি চেয়ে নিয়ে আবারও এলোপাতাড়ি মারপিট করেন মাহমুদুল হাসান। এরপর তিনি বিজিবি সদস্যকে মারপিটের নির্দেশ দেন। এই মারপিটের কথা বাইরে প্রকাশ করলে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে তিনি কক্ষ ত্যাগ করেন। তাঁর নির্দেশনামতে বিজিবি সদস্যও ওই দুই কর্মকর্তাকে মারপিট করেন এবং কক্ষে আটকে রাখেন।

পরে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে যান। পরবর্তী সময়ে অবস্থার অবনতি হলে সোমবার তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। কিছুটা সুস্থ হয়ে গতকাল অভিযোগ দাখিল করেছেন এবং মানববন্ধন করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাটগ্রাম উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সাবরিনা লাকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোট গ্রহণের দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে কি না, তা আমি জানি না বা আমাকে কেউ জানায়নি। তবে সোমবার দুপুরের পর জালাল নামের এক কর্মকর্তাসহ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিষয়টি আমাকে জানান।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটের দিন আমরা তো একাই ছিলাম না। সেখানে সাংবাদিক, পোলিং এজেন্টসহ অনান্য সহ–প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ অনেকেই ছিল। তা কেউ জানল না, শুনলেনও না? অথচ তাঁরা দুই দিন পরে এসে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযোগ করছেন। তাঁরা সেদিনই কেন অভিযোগ করলেন না তাঁদের জিজ্ঞাসা করুন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা তাঁরা জানা নেই।