শিম চাষ করতে সাধারণত মাচার প্রয়োজন হয়। তবে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক এ কে এম আমিনুল ইসলামের দাবি, মাচা ছাড়া শিম চাষ করা যাবে এমন নতুন দুটি জাত উদ্ভাবন করেছেন তিনি।
সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা) এ কে এম আমিনুল ইসলাম জানান, শিমের জাত দুটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বিইউ খাট শিম ৮’ ও ‘বিইউ খাট শিম ৯’। সম্প্রতি নতুন দুটি জাত বীজ বোর্ডের অনুমোদনও পেয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এমন শিম সাধারণত জংলি প্রকৃতির হওয়ায় এবং শিমে গন্ধ থাকায় এসব খাবার অনুপযোগী হয়। আমিনুল ইসলাম খাট জাতের মধ্যে দেশি শিমের গুণাগুণ আনার জন্য ৮ বছর গবেষণা করে সফল হয়েছেন। তিনি একটি খাট জাতের সঙ্গে দেশীয় জাতের সংকরায়ণ-পরবর্তী পিউর লাইন নির্বাচনের মাধ্যমে জাত দুটি উদ্ভাবন করেছেন। এর আগেও তিনি দেশি শিমের বিভিন্ন গুণগত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ছয়টি জাত উদ্ভাবন করেন। তাঁর উদ্ভাবিত জাতগুলো আকার, আকৃতিগত বৈশিষ্ট্য, ফলন, রং, গড়ন, স্বাদ ও পুষ্টিগত গুণাগুণ বিবেচনায় অনন্য। শিমের গতানুগতিক জাত থেকে তাঁর উদ্ভাবিত জাতগুলো সহজেই আলাদা করা যায়। এদের মধ্যে বিইউ শিম ৪-এর শিমে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাভোনয়েড বেশি থাকায় এটি ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারবে। বিইউ শিম ৫ গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফল ধরায় এটি ছাদ কৃষিতে টবে চাষ করার জন্য বিশেষ উপযোগী। আর বিইউ খাট শিম ৮ ও বিইউ খাট শিম ৯ জাত দুটি কোনো ধরনের সাপোর্ট খুঁটি ও মাচাবিহীনভাবে মাঠ ফসলের মতো চাষ করা যাবে, যা দেশে শিম চাষে গতিশীলতা আনবে।
বিইউ খাট শিম ৮
একটি বিদেশি খাট জাতের সঙ্গে দেশীয় জাতের সংকরায়ণ-পরবর্তী পিউর লাইন নির্বাচনের মাধ্যমে এ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি একটি আলোক সংবেদনশীল ও আগাম জাত। আগাম জাত হিসেবে আগস্ট মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এর বীজ বপন শুরু করা যায়। গাছের উচ্চতা ৩৫-৪৫ সেমি, শুটির রং সবুজ, শিরাগুলো বেগুনি রঙের, নলডগ টাইপের, মাংসল ও শাঁস নরম হওয়ায় খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। প্রতিটি শিমের ওজন ১৮.০ থেকে ২০.০ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ১৪.০-১৬.০ সেমি, প্রস্থ ১.৫ - ২.০ সেমি, শিমে ৬-৮টি বীজ হয়, গাছপ্রতি ৭৫-৮০টি শিম ধরে। জীবনকাল ১২০-১৩০ দিন। গাছপ্রতি ফলন ১২০০-১৫০০ গ্রাম। জাতটি সারা দেশে চাষ উপযোগী।
বিইউ খাট শিম ৯
একটি বিদেশি খাট জাতের সঙ্গে দেশীয় জাতের সংকরায়ণ-পরবর্তী পিউর লাইন নির্বাচনের মাধ্যমে এ জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এটি একটি আলোক সংবেদনশীল ও আগাম জাত। আগাম জাত হিসেবে আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এর বীজ বপন শুরু করা যায়। গাছের উচ্চতা ৪০-৫০ সেমি, শুটির রং সবুজ, শিরাগুলো বেগুনি রঙের, শুটি মাংসল ও শাঁস নরম হওয়ায় খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। প্রতিটি শিমের ওজন ৯.০-১০.০ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ৮.০-৯.০ সেমি, প্রস্থ ১.৫-২.০ সেমি, শিমে ৫-৬টি বীজ হয়, গাছপ্রতি ৭৫-১০০টি শিম ধরে। জীবনকাল ১২০-১৩০ দিন। গাছপ্রতি ফলন ৭০০-৯০০ গ্রাম। জাতটি সারা দেশে চাষ উপযোগী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ভাবিত শিমের জাতগুলো উচ্চতায় ছোট হওয়ায় মাচা বা খুঁটি ছাড়াই মাঠ ফসলের মতো চাষ করা যাবে, ফলে উৎপাদন খরচ কম হবে। কৃষকেরা জাতগুলো চাষ করে অধিক লাভবান হবেন। এসব জাত টবেও চাষ উপযোগী, ফলে নগর বা ছাদকৃষিতেও অসামান্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে।