তজুমদ্দিনের চাঁচড়া ইউপি নির্বাচন

দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ৫৫

তজুমদ্দিনের চাঁচড়া ইউপি নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় এভাবেই বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়
প্রথম আলো

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে।

সংঘর্ষের সময় বাজারের দোকানপাট ও ইউপির আশপাশের বসতঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের অন্তত ৫৫ জন আহত হন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা রাত থেকে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত কয়েক দফা ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ভোলা সদর হাসপাতাল ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, শনিবার রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁচড়া ও কাটাখালী গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ও বাজারে হামলা চালান আওয়ামী লীগের লোকজন। তাঁরা পাঁচটি বসতবাড়ি ও সাতটি দোকানপাট ভেঙেছেন। পিটিয়ে ও কুপিয়ে ২৫ জনকে আহত করেছেন। এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতে ও সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে কয়েকবার টহল দিয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

তাঁরা আরও বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু তাহের গতকাল শনিবার বিকালে তাঁর বাড়ি দক্ষিণ চাঁচড়ায় উঠান বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তাঁর সমর্থকেরা মিছিল বের করেন। তাঁরা এ মিছিল নিয়ে মঙ্গল শিকদারের উত্তর বাজারে যান। সেখানে তাঁরা বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হান্নানের কর্মী দ্বীপক ও সাবেক ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানকে পিটিয়ে জখম করেন। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে কাটাখালী গ্রামে যান। সেখানে তাঁরা আবদুল হান্নানের আরেক কর্মী মো. সলেমানকে মারধর করেন এবং মো. কামালের দোকান ভাঙচুর করেন। এভাবে মিছিল নিয়ে চারদিকে হামলা করার কারণে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ক্ষুব্ধ বর্তমান চেয়ারম্যানের লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে লাঠিসোঁটা হাতে ইউপির আশপাশে জমায়েত হন। আবু তাহেরের লোকজন মিছিল নিয়ে এলে তাঁদের ওপর বর্তমান চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা করেন। পরে আবু তাহেরের লোকজন শনিবার রাতে ও রোববার কয়েক দফায় আবদুল হান্নানের সমর্থকদের বাড়িঘর, দোকানপাটে হামলা চালান।

আবদুল হান্নান বলেন, ‘দুদিন ধরে তাণ্ডব চালাচ্ছেন আবু তাহেরের লোকজন। তাঁরা আমার সমর্থক নুর ইসলাম, জাকির হোসেন খনকার, আজগর আলী, আ. আলীর বসতঘর এবং আলমগীর হোসেন, জসিমউদ্দিন হাওলাদার, বেলাল হোসেন, মাকসুদুর রহমান, হেলাল উদ্দিন, মো. কামাল হোসেনসহ অন্তত ২৫ জন কর্মীর দোকানে হামলা ও তাঁদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেছেন।’

তবে চাঁচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুল হক মাস্টার জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে নৌকার প্রার্থী আবু তাহেরের নির্বাচনী মিছিল শেষে বাড়ি যাওয়ার সময় আবদুল হান্নানের সমর্থকেরা অতর্কিত হামলা চালান। তাঁরা লোকজনকে মারধর করে দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট চালান। এ সময় গ্রামবাসী এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।

আবু তাহেরের বড় ছেলে সাদ্দাম হোসেন তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘প্রতিপক্ষের হামলায় আমাদের ৩০ জন কর্মী–সমর্থক আহত হয়েছেন। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ভোলা সদরে চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া তাঁরা হামলা চালিয়ে আমাদের পাঁচ সমর্থকের দোকানপাট ভাঙচুর করেছেন।’

তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম জিয়াউল হক বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ কয়েক দফা চাঁচড়া ইউনিয়নে টহল দেয়। পরিস্থিতি এখন শান্ত। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আমির খসরু গাজী বলেন, ‘তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউপি নির্বাচনের যাছাই-বাছাই শেষে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান (আওয়ামী লীগ) আবু তাহের, বর্তমান চেয়ারম্যান (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) আবদুল হান্নান রিয়াদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এম আলাউদ্দিন জামালের প্রার্থিতা টিকে গেছে। ইউনিয়নে এখনো প্রতীক বরাদ্দ হয়নি। এরই মধ্যে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার খবর শুনেছি। তবে কোনো পক্ষের লিখিত অভিযোগ পাইনি।’