দীর্ঘ আন্দোলনের পর অবশেষে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের অরক্ষিত বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শেষে হয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। পাঁচ শতক জমির ওপর বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ চলমান। সিমেন্ট ও রড দিয়ে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটির ৫ ফুট বেদির ওপর থাকবে ২০ ফুট পিলার। সব মিলিয়ে স্মৃতিস্তম্ভের উচ্চতা হবে ২৫ ফুট।
চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা-১ আসনের সাংসদ মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বধ্যভূমির স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় সেখানে অন্যদের মধ্যে জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম মোস্তফা কামাল উপস্থিত ছিলেন।
জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সরদার রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালের ১৩ আগস্ট পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সদস্যরা গানবোটে করে নদীপথে কপিলমুনি থেকে খুলনায় যাচ্ছিল। কপোতাক্ষ নদের জালালপুর গ্রাম থেকে হানাদার বাহিনীর ওপর হামলা করা হয়। পরে ১৫ আগস্ট রাতে হানাদার বাহিনী এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে শিশুসহ ১৮ জনকে হত্যা করে। তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছরে এসে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি সূত্র জানায়, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট রাতে তালা উপজেলার জালালপুর গ্রামে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন শ্রীমন্তকাটি গ্রামের আবদুল বারী (২৮), কৃষ্ণকাটি গ্রামের বদির শেখ (৩২), জালালপুর গ্রামের অন্নদা সেন (৮৫), আছিয়া বিবি (৪৫), অনিমা দাশ (২৬), দীপংকর দাশ (১), দুলাল চন্দ্র বর্ধন (১৫), হরিপদ ঘোষ (৭৫), অধীর চন্দ্র ঘোষ (৬৫), সাহেব সেন (৩০), উমাপদ দত্ত (৪০), বাদল প্রামাণিক (৫০), অশোক প্রামাণিক (৩৫) ও মোবারক মোড়ল (২০)। এ ছাড়া যুদ্ধ চলাকালে নাম না–জানা আরও অনেকে এখানে শহীদ হয়েছেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রজিত দাশ বলেন, ২০০৭ সালে কমিটির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জালালপুর ইউপির বধ্যভূমি ও স্মৃতিস্তম্ভের বিষয়ে রেজল্যুশন করা হয়। পরে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান সরদার রফিকুল ইসলাম ইউপি কার্যালয়ের সামনে স্মৃতিফলক নির্মাণ করেন। সেই থেকে সরকারিভাবে ২৫ মার্চ ওই স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় জালালপুর বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। সাতক্ষীরার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স শফি এন্টারপ্রাইজ প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই নির্মাণকাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে স্মৃতিস্তম্ভের কাজ বাস্তবায়ন করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর।
জালালপুর বধ্যভূমি স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোড়ল আবদুর রশিদ বলেন, একাত্তরে ১৮ জন শহীদের মধ্যে অনিমা দাশ নামে একজন গৃহবধূ ছিলেন। তাঁর এক বছরের শিশু দীপংকর দাশও হানাদারদের গুলিতে নিহত হয়। তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হচ্ছে।
জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক বলেন, দীর্ঘদিন ইউপির সামনে ছোট স্মৃতিস্তম্ভ ছিল। তবে বর্তমান সরকার বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করায় এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। এখানে দর্শনীয় পার্ক করা হলে মানুষের সমাগম আরও বাড়বে।