সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ

দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞ দলের কনটেইনার ডিপো পরিদর্শন

শুক্রবার সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপো পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ দল
ছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে আহত এবং রাসায়নিক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ দল।

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৯ সদস্যের এ দল কনটেইনার ডিপো এলাকা পরিদর্শন করে।

এ সময় তারা স্থানীয় মানুষ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের যেসব কর্মকর্তারা গত শনিবারের অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে ওই এলাকায় কাজ করেছেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যরা পরে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলবেন। তাঁদের স্বাস্থ্যের দিক পর্যবেক্ষণে রেখে পরে দলটি একটা গাইডলাইন তৈরি করবে—যাতে পরবর্তী সময়ে দেশের কোথাও এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া যায় এবং ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনা যায়।

ডিপো এলাকা পরিদর্শনকালে কথা হয় বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক নাজমুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মূলত ডিপোর ভেতরে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঘটনার পর থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের যেসব কর্মকর্তা এখানে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের সঙ্গেসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও আশপাশের এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য এসেছেন। দুর্ঘটনার পরবর্তী রাসায়নিকের প্রভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ এবং ঘটনাস্থলে থাকা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব পড়ছে কিংবা আক্রান্ত ব্যক্তিরা দীর্ঘ মেয়াদে অসুস্থ থাকেন কি না, তা দেখবেন তাঁরা। পরে একটা গাইডলাইন তৈরি করবেন—যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের সক্ষমতা বাড়িয়ে মানুষের জানমালের ক্ষতি ও স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি কমানো যায়। একইসঙ্গে এই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে যাঁরা বেঁচে আছেন, দীর্ঘ মেয়াদে তাঁদের স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব নিরূপণ ও তা প্রশমনের চেষ্টা করাও পরিদর্শনে আসার উদ্দেশ্য।

অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শ্বাসনালি। এর সঙ্গে মানুষের মধ্যে যে ভয়ভীতি তৈরি হয়েছে সেগুলোর ওপরও সমানভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন তাঁরা। স্থানীয় কারও যদি কোনো ধরনের শারীরিক অসুবিধা দেখা দেয়, তাহলে অবহেলা না করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের দেখানোর অনুরোধ জানান তিনি।

পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম, মহাখালী ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিট হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক অনিন্দিতা শবনম কোরেশী, সহকারী পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ, ইভালুয়েটর ডা. ফাবলিনা নওশিন, আইএইচআর–এর ডাটা ম্যানেজার রাকিবুল ইসলাম, বিসিআইসির ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেফটি অ্যান্ড হেলথ ডিপার্টমেন্টের কেমিস্ট মো. জিয়াউল হক, ডেপুটি চিফ কেমিস্ট হুমায়ন কবির। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী ও সীতাকুণ্ডের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নুর উদ্দিন রাশেদ।

গত শনিবার রাত সোয়া ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের ওই ডিপোর লোডিং শেডে একটি কনটেইনারে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর একটি কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সদস্যরা এবং পরে সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনসহ মোট ১৮টি ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা আগুন নির্বাপণে কাজ করেন। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পাঁচ দিন সময় লেগে যায়। এ দুর্ঘটনায় মোট ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে।