ভাঙন ও ভাঙন–আতঙ্কে গত বছর দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের অন্তত দেড় হাজার পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।
‘নদীভাঙন এলাকার মানুষ বইলা আমাগোর সাথে কেউ আত্মীয়তাও করতে চায় না। ছেলেমেয়ের বিয়ে-শাদি দিতে গেলে বলে এগের কোনো বাড়ি-ঘর নাই। এরা নদীভাঙা মানুষ। এগের সাথে কুটুম করে লাভ নাই। এই অপবাদ কত দিন মাথায় নিইয়া চলব?’ ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন জলিল শিকদার। পরিবার নিয়ে তিনি থাকেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের নাসির সরদার পাড়ায়।
আগে জলিল শিকদারের বাড়ি ছিল দৌলতদিয়ার ইসমাঈল শিবরামপুর এলাকায়। পদ্মা নদীর ভাঙনে জমিজমা, ঘরবাড়ি সব বিলীন হয়েছে। পরে নাসির সরদার পাড়ায় অন্যের জমি শনকরা (ইজারা) নিয়ে বাস করেন। দৌলতদিয়া ইউনিয়নে তাঁর মতো অনেকে পদ্মার ভাঙনে বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে অন্যের জমিতে বাস করছেন।
এ বছরও বর্ষা মৌসুমের দৌলতদিয়া ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের পদ্মার তীরবর্তী এলাকা। এই দুটি ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, গত বছর ভাঙন ও ভাঙন–আতঙ্কে অন্তত দেড় হাজার পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এ বছরও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে দুই হাজার পরিবারের বসতভিটা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ফেরি থেকে নদীর পাড় ধরে দেবগ্রামের অন্তারমোড় পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকা ভাঙছে। স্থানীয় লোকজন জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙন বাড়তে থাকে। প্রতিদিন ফসলি জমি বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের কাছাকাছি এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কে দিন পার করছেন। তাঁদের অনেকে বসতভিটা ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
দেবগ্রাম মুন্সিবাজারের কাছে খালেক মুন্সির ১০ কাঠা জমি বছরের ১০ হাজার টাকা শনকরা নিয়ে বাস করছেন হযরত শেখ। তাঁর বাড়ি ছিল বেথুরী গ্রামে। খালেক মুন্সি বলেন, ‘১০ বছর আগে বিলীন হলে এখানে বাড়ি করি। এবার ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে প্রতিদিন নদীর পাড়সহ ফসলি খেত বিলীন হচ্ছে। মেম্বার-চেয়ারম্যান কত আইলো। সবাই বলে নদী শাসন হবে, কিছুই তো দেহি না।’
দৌলতদিয়ার গোলাপ আলী শেখ পরিবারের প্রায় ২৫০ বিঘা জমি ছিল। ছিল বড় বাড়ি। ২০০৭ সালে ভাঙনে সব নদীতে বিলীন হয়ে যায়। গোলাপ শেখ বলেন, ভাঙনে সব বিলীন হওয়ায় এখন ১ শতাংশ জমিও নেই। কেউ অন্যের জমিতে শনকরা নিয়ে, কেউ গোয়ালন্দে ভাড়া বাসায় থাকছে। গত বছর কিছু জমি জেগে ওঠায় সেখানে বাদামের আবাদ করেছেন।
গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা মুন্সি ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের অনেক এলাকা মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত নদী শাসনের উদ্যোগ নেওয়া না হলে ‘গোয়ালন্দ ঘাট’ থেকে ‘ঘাট’ শব্দটি আর লিখতে পারব না।
ইউএনও আজিজুল হক খান বলেন, ‘ভাঙনরোধে গত সপ্তাহে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী সঙ্গে নিয়ে ভাঙন এলাকা দেখেছি। ইতিমধ্যে ফেরিঘাট এলাকায় উপজেলা
প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।