দুই বছর পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসনের সাবেক সাংসদ কাজী জাফরউল্যাহ নিজ সংসদীয় আসন ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এসেছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ভাঙ্গা পৌরসভার কাছে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে অবস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সমবেত নেতা-কর্মী ও জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন তিনি।
কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘করোনার কারণে দুই বছর পর এলাকায় এসে দেখছি, অনেক পরিচিত মুখ নেই। অনেক পরিচিত মুখ আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেছেন। আমি দুই বছর এলাকায় আসতে পারিনি। তবে আমার শরীরে প্রবহমান প্রতিটি রক্তকণা আমাকে এলাকায় আসার জন্য তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।’
‘গরিব লোক, ছোট ছোট নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে ভোট দিয়েছেন। বড় নেতারা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন’—এমন মন্তব্য করে সাবেক এই সাংসদ বলেন, ‘আপনারা কেন আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেবেন? সবাইকে একসঙ্গে থাকতে হবে। তবে দিনে কাজী, রাতে নিক্সন (সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন)—এ রাজনীতি বাদ দিন।’
কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘আমরা অনেক ভুল করেছি। আজ সময় এসেছে ভুল শুধরে নেওয়ার। আমাদের নিজেদের সংগঠিত হতে হবে, শেখ হাসিনার হাতকে আমাদের শক্তিশালী করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত বর্তমানে দুর্বল। কিন্তু রাজনীতি সব সময় একরকম থাকে না। তাই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের ভাঙ্গাকে মুক্ত করতে হবে।’ ভাঙ্গা থানা-পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, দীর্ঘ প্রায় দুই বছর পর ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গতকাল প্রথম সভা করেন কাজী জাফরউল্যাহ। ওই সভায় অন্যদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেদায়েতউল্লা সাকলাইন, সাধারণ সম্পাদক ফাইজুর রহমান ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাহাদাত হোসেন বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এই তিন নেতাই কাজী জাফরউল্যাহকে ছেড়ে সাংসদ নিক্সনের পক্ষে যোগ দেন। ওই সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সম্পাদককে বহিষ্কারের সুপারিশ করে কেন্দ্রে চিঠি পাঠায়। ওই তিন নেতাই গত এক মাসের মধ্যে আবার কাজী জাফরউল্যাহর দিকে চলে আসেন।
সভাস্থলে উপস্থিত একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, এত দিন উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে ফরিদপুর-৪ আসনের বর্তমান সাংসদ মুজিবর রহমান চৌধুরীর ছবি সাঁটানো ছিল। গতকাল তাঁর ছবি নামিয়ে সেখানে কাজী জাফরউল্যার ছবি সাঁটানো হয়। এক বছর আগে নিক্সনপন্থীরা একই কায়দায় কাজী জাফরউল্যার ছবি সরিয়ে দিয়েছিলেন।
এর আগে গতকাল দুপুরে কাজী জাফরউল্যাহর বাড়িতে জেলা আওয়ামী লীগের একটি দল তাঁর সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কাজী জাফরউল্যাহ তখন বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ইতিমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৬ এপ্রিল ফরিদপুরে কাউন্সিলকে সামনে রেখে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। তারপর প্রতিটি উপজেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল সকাল ৯টার দিকে কাজী জাফরউল্যাহ শিমুলিয়া ঘাটে এসে পৌঁছালে দুই শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা তাঁকে স্বাগত জানিয়ে কাউলীবেড়ার তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান।
প্রসঙ্গত, সংসদ নির্বাচনে একসময় ফরিদপুর-৪ আসনটি কাজী জাফরউল্যাহ, তাঁর স্ত্রী ও চাচার নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২০১৪ সালে ওই আসনে কাজী জাফরউল্যাহকে হারিয়ে মাদারীপুরের শিবচরের দত্তপাড়া এলাকার মুজিবর রহমান চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনের পর উপজেলা আওয়ামী লীগ কাজী জাফরউল্যাহপন্থী ও নিক্সনপন্থী—এই দুই দলে ভাগ হয়ে যায়। ২০১৮ সালেও কাজী জাফরউল্যাহকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন নিক্সন চৌধুরী।
নিক্সন ২০২১ সালের নভেম্বরে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৬ মার্চ কাজী জাফরউল্যাহ ভাঙ্গা ছেড়ে যান। এরপর গতকালই তিনি প্রথম ভাঙ্গায় যান।