তিন সপ্তাহ পরই খেত থেকে আলু তোলা শুরু হবে। গত বছরের লোকসানও পুষিয়ে নেওয়ার আশা।
মকবুল হোসেন (৫০) এবার তিন বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষ করেছেন। তিন সপ্তাহ পরই তিনি খেত থেকে আলু তুলতে পারবেন। বাজারে আলুর দাম ভালো থাকায় লাভের আশায় আছেন মকবুল। এর মাধ্যমে গত বছরের লোকসানও পুষিয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।
দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের খড়িবাড়ি এলাকা মকবুল হোসেনের বাড়ি। তাঁর মতোই উপজেলার অনেক চাষি আলুখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গত মঙ্গলবার উপজেলার দক্ষিণ কোতোয়ালি, মহব্বতপুর, খড়িবাড়ি, ঘুঘুডাঙ্গা, পাথরঘাটা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুনর্ভবা নদীর পাড় ঘেঁষে বিস্তীর্ণ আলুর খেত। কেউ দিচ্ছেন নিড়ানি, কেউ কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। কেউবা ব্যস্ত আলুগাছের গোড়ায় মাটি দিতে।
কৃষক মকবুল হোসেন জানান, প্রতি বিঘা বর্গা নিয়েছেন ২২ হাজার টাকায়। প্রতি বিঘায় হালচাষ, বীজ, সার, কীটনাশকসহ মোট খরচ ৭১ হাজার ৯০০ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি বিঘায় ১০৫-১১০ মণ আলু পাওয়া যাবে। গতবার প্রতি মণের দাম পেয়েছিলেন প্রায় ৭০০ টাকা। বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। নতুন আলুর দাম আরও বেশি পাওয়া যাবে।
মকবুল বলেন, ‘এক বছরের তানে জমিখান আধি নিছো। আলু উঠায়া মাকই (ভুট্টা) লাগামো, আলুত লজ হইলি মাকইত পোষায়া যাইবে। আলু, মাকই আর বোরে তিনডা ফসল উঠাবার পারিলে লাভ হইবে।’
মহব্বতপুর গ্রামের কৃষক হাসেম আলী (৪৮) জানান, তিনি ৪৫ শতক মাটিতে আগাম আলু লাগিয়েছেন। ঠিকমতো ফলন হলে ৯৫-১০০ মণ আলু পাওয়া যাবে। বর্তমানে বাজারে আলুর চাহিদার তুলনায় জোগান কম। সে ক্ষেত্রে প্রথম দিকে নতুন আলু বাজারে আনতে পারলে ভালো দাম পাবেন তিনি। সব মিলিয়ে ৪০ শতক মাটিতে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন হাশেম আলী।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে জেলায় আলু চাষ হয়েছিল ৪৪ হাজার হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন ছিল প্রায় ৯ লাখ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে আগাম আলু চাষ হয়েছে প্রায় সাড়ে দশ হাজার হেক্টর জমিতে। এ জেলায় সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে গ্যানেলা, কার্ডিনাল ও স্ট্রারিক্স জাতের আলু।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তৌহিদ ইকবাল বলেন, সম্প্রতি আলুর দাম বাড়ায় আলু চাষে কৃষকেরা উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বেশি। সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বরে আলু চাষ শুরু হলেও এবার অনেকেই সেপ্টেম্বরের শুরুতে গ্যানেলা জাতের আলু লাগিয়েছেন। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে নতুন আলু উঠবে। তখন আলুর দামও কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আসবে।