অষ্টম শ্রেণিতে উঠে নতুন বই নিয়েছিল বিপ্লব শেখ। কিন্তু সেই বই নিয়ে আর বিদ্যালয়ে যাওয়া হয় না। কাজের সন্ধানে ঢাকায় যেতে হয়। তবে ঢাকায় যাওয়ার সময় সে বই সঙ্গে নিয়ে যায়। জেএসসি পরীক্ষার কয়েক মাস আগে বাড়ি ফিরে আসে। গ্রামে দিনমজুরের কাজ করে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষকদের কাছ থেকে পড়া বুঝে নেয়।
এভাবেই প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত রাজশাহীর চরখিদিরপুর আলোর পাঠশালা থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল বিপ্লব শেখ।
গতকাল মঙ্গলবার পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। বিপ্লব শেখ সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।
বিপ্লব শেখের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিরপুর গ্রামে। তার বাবার নাম রুহুল আমিন। মায়ের নাম ফুলজান বিবি। বাবা দিনমজুর আর মা গৃহিণী। বিপ্লবের ছোট আরও একটি ভাই ও একটি বোন আছে।
চরখিদিরপুর গ্রামের তিন দিকে ভারতীয় সীমান্ত। একদিকে বাংলাদেশের পদ্মা নদী। নদীভাঙনের কারণে গ্রামের আবাদি জমি এখন শেষের দিকে। বিপ্লব শেখের পরিবার বারবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন বাড়ির ভিটা ছাড়া তাদের আর কোনো সম্পদ নেই। গ্রামের কমবেশি সব মানুষেরই জীবিকার প্রধান উপায় পদ্মা নদীতে মাছ শিকার আর গবাদিপশু পালন করা।
প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন জানান, এই গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। মাধ্যমিক শ্রেণির পড়াশোনার জন্য প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে আলোর পাঠশালা স্থাপন করার আগে গ্রামের মানুষের ধারণাই ছিল না যে পঞ্চম শ্রেণির পর আরও লেখাপড়া আছে। এ জন্য তাঁরা তৃতীয় শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই মেয়েদের বিয়ে দেওয়া শুরু করেন। আর পঞ্চম শ্রেণি পাস করলেই ছেলেরা হয়ে যায় রাখাল।
রোজিনা খাতুন প্রথম আলোকে জানান, এই পরিবেশে বিপ্লব শেখ আলোর পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু পরিবারের অভাবের কারণে
নিয়মিত বিদ্যালয়ে ক্লাস করতে পারত না। ঢাকা থেকে ফিরে আসার পর তার বাবা না চাইলেও মা ফুলজান বিবি তার ছেলের পড়াশোনায় উৎসাহ দেন। এ জন্য তিনি বিদ্যালয়ে এসে তাঁর ছেলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের অনুরোধ করেন।
রোজিনা খাতুন আরও বলেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বুঝতে পেরেছিলেন, ছেলেটা মেধাবী। এ জন্য অনিয়মিত হলেও সব সময় তাঁরা ছেলেটার
সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। ক্লাস ছুটির পরেও তার পড়াশোনা বুঝিয়ে দিতেন। আর বিদ্যালয়ের কোনো খরচও নেওয়া হয়নি তার কাছ থেকে।
পরীক্ষার ফল হাতে পেয়েই বিপ্লব শেখ গতকাল পদ্মা নদী পার হয়ে প্রথম আলোর রাজশাহী কার্যালয়ে আসে।
বিপ্লব শেখ প্রথম আলোকে জানায়, যেকোনো মূল্যে সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। পড়াশোনা শেষে চাকরি করতে চায় পুলিশে। সফল হতে পারলে সে গ্রামের বাল্যবিবাহ বন্ধ করার উদ্যোগ নেবে।
তবে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বিপ্লবের বাবা রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ছেলের পড়াশোনার খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য তাঁর নেই। এ জন্য কারও সহযোগিতা প্রয়োজন।