দুই দফার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন্ধ থাকার পর কক্সবাজার উপকূলে ফের লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। বিসিকের তথ্যমতে, গত বুধবার থেকে জেলার ৫০ হাজার একরের বেশি জমিতে পুরোদমে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত। কিন্তু দাম নিয়ে হতাশায় চাষিরা। কারণ, প্রতি মণ লবণ উৎপাদনে ২০০ টাকার বেশি খরচ হলেও চাষিরা ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
জেলার লবণচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম দফার ঝড়-বৃষ্টিতে লবণ উৎপাদন পাঁচ দিন বন্ধ ছিল। এরপর বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ ঠিকঠাক করে পুনরায় লবণ উৎপাদন শুরুর মুহূর্তে ৫ মার্চ দ্বিতীয় দফার ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। এতে আরও পাঁচ দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ ছিল। এখন ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ ঠিক করে পুরোদমে লবণ উৎপাদন চলছে। কিন্তু লবণের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন চাষিরা। অনেকে লোকসানের আশায় নতুন করে লবণ উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
বিসিকের তথ্যমতে, দুই দফার ঝড়-বৃষ্টিতে ১০ দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ ছিল। এ কারণে ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিকটন লবণ উৎপাদন কম হয়েছে। এর মধ্যে উৎপাদিত প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন লবণ বৃষ্টির পানিতে গলে (নষ্ট) গেছে। গত বছরের শুরু থেকে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত হয়েছিল ৭ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিকটন। এবার একই সময়ে উৎপাদিত হয়েছে ৫ লাখ ৫৯ হাজার ১৫৫ মেট্রিকটন। ঘাটতি আছে ২ লাখ ২৯ হাজার মেট্রিকটন
গত বুধবার দুপুরে উখিয়ার ছেপটখালী এলাকায় দেখা গেছে, কয়েক শ একর জমিতে চাষিরা লবণ উৎপাদন করছেন। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় সেই লবণ মাঠে স্তূপ করে রেখেছেন তাঁরা।
স্থানীয় চাষি আমির হোসেন (৫০) বলেন, দুই দফার ঝড়-বৃষ্টিতে তাঁর লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তারপরও লবণ উৎপাদন করে চলেছেন। কিন্তু লবণের ন্যায্যমূল্য নিয়ে কেউ ভাবছেন না। লোকসান দিয়ে লবণ বিক্রি করে দাদনের টাকাও পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না।
বিসিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ বছর দেশে লবণের চাহিদা ১৬ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিকটন। জেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ১৮ লাখ মেট্রিকটন। এবার পলিথিন প্রযুক্তিতে লবণ চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে বলে আশা ছিল চাষিদের। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ সেই আশায় আশঙ্কা তৈরি করেছে।
বিসিকের তথ্যমতে, গত ১ ডিসেম্বর থেকে জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদর, উখিয়া উপকূলে লবণ উৎপাদন শুরু হয়। গত ১২ মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে উৎপাদিত হয়েছে ৫ লাখ ৫৯ হাজার ১৫৫ মেট্রিকটন লবণ। কিন্তু লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১২০ থেকে ১৮০ টাকায়, যা গত জানুয়ারি মাসেও বিক্রি হয়েছে ২৪০-২৮০ টাকায়। বিদেশ থেকে আমদানি করা লবণে বাজার সয়লাব হওয়ায় এ পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে।
বিসিক কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী বলেন, বিদেশি লবণের কারণে স্থানীয় চাষিরা লবণের দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ আছে। লোকসানের কারণে বহু চাষি লবণ উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা আছে। গত দুই দফার ঝড়-বৃষ্টিতে ১০ দিন লবণ উৎপাদন বন্ধ ছিল। তখন ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিকটন লবণ উৎপাদন হয়নি। আরও ঝড়-বৃষ্টি হলে কয়েক লাখ মেট্রিকটন লবণ ঘাটতি থাকবে। তখন চাষিরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
লবণচাষি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী বলেন, লবণ আমদানি বন্ধ, উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত, লবণ বোর্ড গঠনসহ নানা দাবিতে চাষিরা আন্দোলন করছেন। কিন্তু প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।