বিভিন্ন দোকান ও গাড়ির গ্যারেজ থেকে সংগ্রহ করা হতো নামীদামি ব্র্যান্ডের খালি মবিলের কনটেইনার। এরপর সেগুলো কারখানায় নিয়ে গিয়ে ভরা হতো বাজারের নিম্নমানের খোলা মবিল। এরপর কনটেইনারে হুবহু নামী কোম্পানির মোড়ক লাগিয়ে বাজারে বিক্রি করা হতো। প্রায় ১০ বছর ধরে এভাবেই পরিচালনা করা হচ্ছিল একটি প্রতিষ্ঠান, নাম মুক্তা ট্রেডার্স।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও র্যাব-৯–এর যৌথ বাজার তদারক অভিযানে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় খোজারখলা এলাকায় সন্ধান মেলে এ কারখানার। পরে প্রতিষ্ঠানটিকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ধ্বংস করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার লিটার খোলা ও ভেজাল মবিল এবং দেড় হাজার বিভিন্ন নামীদামি প্রতিষ্ঠানের খালি কনটেইনার। সিলগালা করা হয়েছে কারখানাটি।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানের নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম মাসুদ ও র্যাব-৯–এর সহকারী পুলিশ সুপার ওবাইন রাখাইন। এতে সহযোগিতা করেন অধিদপ্তরের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী ও র্যাব-৯–এর সদস্যরা।
ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক আমিরুল ইসলাম জানান, কারখানাটিতে ভেজাল ও নিম্নমানের মোড়কজাত করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মবিল দেখে বোঝার উপায় নেই সেগুলো নকল। কারখানাটি থেকে বিপুল পরিমাণ বিক্রয় রশিদ জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো সংগ্রহে রাখা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সেগুলো অনুসরণ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
মোড়কজাতের পর বাজারে প্রচলিত দামের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে সরবরাহ করা হতো। ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের জন্য সেগুলো কিনে নিয়ে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতেন।
অভিযান সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার দক্ষিণ খোজারখলায় নকল মবিল উৎপাদনের কারখানায় বিভিন্ন নামীদামি ব্র্যান্ডের এবং নকল-ভেজাল মবিল মোড়কজাত করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও র্যাব। এ সময় কারখানার দায়িত্বে থাকা কর্মচারী খালেক মিয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে প্রায় ১০ বছর ধরে এ ব্যবসা চালিয়ে আসার কথা স্বীকার করেন তিনি।
খালেক জনিয়েছেন, বিভিন্ন গ্যারেজ ও দোকান থেকে ব্যবহৃত নামীদামি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মবিলের খালি কনটেইনার সংগ্রহ করে কারখানায় আনা হয়। পরে সেগুলোতে বাজারের খোলা মবিল দিয়ে আবার নতুন করে মোড়কজাত করা হতো। মোড়কজাতের পর বাজারে প্রচলিত দামের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে সরবরাহ করা হতো। ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের জন্য সেগুলো কিনে নিয়ে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করতেন।
অভিযানে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালককে পাওয়া যায়নি। পরে মুক্তার ট্রেডার্সের কারখানার দায়িত্বে থাকা খালেক মিয়াকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং কারখানায় থাকা দেড় হাজার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মবিলের খালি বোতল এবং খালি প্রায় দুই হাজার লিটার নিম্নমানের খোলা মবিল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। এ সময় কারখানায় মোড়কজাতে ব্যবহৃত যন্ত্র আয়রন, রং জব্দ করে ধ্বংস করা হয়।