কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় করোনার এ সময়ে ভুট্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। বর্তমানে চলছে ভুট্টা সংগ্রহের উৎসব। বাজারে প্রতি মণ ভুট্টার দাম ৭৮০ টাকা।
এদিকে ভুট্টা চাষের পাশাপাশি প্রতিটি জমিতে ধনেপাতা ও আলুর চাষও করেছেন কৃষকেরা। কৃষকেরা জানিয়েছেন, সার, বীজ, চাষসহ একই খরচে ভুট্টার পাশাপাশি ধনেপাতা ও আলুর চাষ করা যায়। এতে ভুট্টা চাষের খরচ ধনেপাতা ও আলু বিক্রি থেকে উঠে আসে। আবার কিছুটা লাভও হয়। শেষে দেখা যায়, ভুট্টার আয়ের পুরোটাই লাভ।
কৃষকেরা জানিয়েছেন, সার, বীজ, চাষসহ একই খরচে ভুট্টার পাশাপাশি ধনেপাতা ও আলুর চাষ করা যায়। এতে ভুট্টা চাষের খরচ ধনেপাতা ও আলু বিক্রি থেকে উঠে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বারপাড়া, দৌলতপুর, পাঁচগাছিয়া, মারুকা, মালিগাঁও, সুন্দলপুর, গোয়ালমারী, জিংলাতলী ও দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়নের ভুট্টা চাষ বেশি হয়েছে। উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের রাঙ্গাশিমুলিয়া ও ডাকখোলা গ্রামে সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামগুলোর মাঠজুড়ে ভুট্টা আর ভুট্টা। প্রতিটি বাড়ির উঠানে, স্থানীয় স্কুলমাঠে কিষান-কিষানিরা ভুট্টা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ ফসলের মাঠে গিয়ে ভুট্টা সংগ্রহ করছেন। কেউ জ্বালানির জন্য ভুট্টাগাছ, ভুট্টার মোচা, ভুট্টার ছোবড়া সংগ্রহ করছেন। আবার বসতবাড়িগুলোর উঠানে উঠানে কেউ ভুট্টা শুকাচ্ছেন। মাঠে, ঘরে, উঠানে, আড়তে—সব জায়গায় ভুট্টার ছড়াছড়ি। কেউ ভুট্টা বস্তায় ভরে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন।
উপজেলার ডাকখোলা গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, তিনি নিজের সাড়ে ৯ বিঘা জমিতে অগ্রহায়ণ মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথমে ধনে বপন করেন। ওই জমিতে পৌষ মাসের প্রথম সপ্তাহে বপন করেন ভুট্টা। ধনেপাতা বিক্রির পর একই জমিতে মাঘ মাসের শেষ সপ্তাহে ভুট্টার সঙ্গে আলুর চাষ করেন। আলু তোলার পর বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে ভুট্টা সংগ্রহ করেন। তিনি জানান, আবাদকৃত জমিগুলো থেকে ৬০ হাজার টাকার ধনেপাতা এবং ৪৫ হাজার টাকার আলু বিক্রি করেছেন। সেখানে পাঁচ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। আর ভুট্টা বিক্রিতে লাভ হবে দুই লক্ষাধিক টাকা।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ভুট্টা চাষের ফলে পরিবারের রান্নার জন্য তাঁর চার মাসের জ্বালানি খরচও বাঁচবে। তিনি ১০ বছর ধরে এই তিন সাথি ফসলের আগাম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। চলতি বছর করোনাকালে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং ঝোড়ো হাওয়া না হওয়ায় ফসল আবাদে এলাকার প্রায় সব কৃষকই শতভাগ লাভবান হয়েছেন। যে কৃষকেরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল, তাঁরা কাচা ভুট্টার গাছ (গরুর খাবারের জন্য) বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। প্রতি বিঘা জমির ভুট্টাগাছ ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ডাকখোলা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন, হোসেন মিয়া, কবির হোসেন ও রাঙ্গাশিমুলিয়া গ্রামের কৃষক মো. রতন মিয়াও চলতি বছর ভুট্টা আবাদে লাভবান হয়েছেন বলে জানান। ডাকখোলা গ্রামের কিষানি কোহিনুর আক্তার বলেন, নিজে পরিশ্রম করে ফসল আবাদ করতে পারলে যেকোনো ফসলেই লাভবান হওয়া যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বলেন, চলতি বছর দাউদকান্দিতে ৭ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। করোনাকালীন আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতি ৩০ শতাংশ জমিতে ২৬ থেকে ৪০ মণ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। ভুট্টা আগাম চাষ করতে পারলে এবং ব্যবস্থাপনা ভালো হলে বাম্পার ফলন পাওয়া সম্ভব।