দাঁড়াশ সাপের ‘যুদ্ধ নাচ’ দেখলেন গ্রামবাসী

নাটোর জেলার মানচিত্র
নাটোর জেলার মানচিত্র

নিরীহ প্রজাতির নির্বিষ ও উপকারী সাপ দাঁড়াশ। এই সাপ প্রচুর পরিমাণে ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষা করে বলে একে ‘কৃষকের বন্ধু’ও বলা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সাপের মধ্যে লড়াই হয়। তবে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে কেবল দাঁড়াশ সাপই ‘যুদ্ধ নাচ’ (কমব্যাট ড্যান্স) দেখায়। প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি পুরুষ সাপের মধ্যে এ লড়াইয়ে এগুলো পরস্পরের দেহের অর্ধেক রশির মতো পেঁচিয়ে মাটির সমান্তরালে অথবা কিছুটা ওপরে থাকে।

দুটি দাঁড়াশ সাপের মধ্যে এমন মারামারি দেখা গেছে নাটোরের নলডাঙা উপজেলায়। আজ সোমবার দুপুরে সাপ দুটির এ বিরল ‘যুদ্ধ নাচ’ দেখতে উপজেলার বাঁশভাগ গ্রামের এক পুকুরপাড়ে জড়ো হন অর্ধশতাধিক নারী–পুরুষ।

বাঁশভাগ গ্রামের বাসিন্দারা জানান, আজ বেলা দুইটার দিকে গ্রামের আবদুল হামিদের পুকুরপাড়ে হঠাৎ করেই দুটি দাঁড়াশ সাপ মাথা উঁচিয়ে পরস্পরের সঙ্গে মারামারি শুরু করে। ঘটনাটি প্রথমে গ্রামের এক তরুণের চোখে পড়ে। তাঁর কাছে খবর পেয়ে সেখানে গ্রামের সব বয়সী মানুষ জড়ো হন। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে বিরল এ দৃশ্য উপভোগ করেন তাঁরা।

বাঁশভাগ গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, ‘সাপের যৌনমিলনের ঘটনার গল্প শুনেছি। সিনেমা নাটকেও দেখেছি। কিন্তু দুটি সাপের মধ্যে যুদ্ধ দেখিনি। আজ দেখলাম। প্রায় আট ফুট লম্বা দুটি দাঁড়াশ সাপ। সাপ দুটি মাটি থেকে প্রায় তিন ফুট উঁচুতে দাঁড়িয়ে একে অপরকে উপর্যুপরি আক্রমণ করতে থাকে। কেউ কাউকে জড়িয়ে না ধরে পরস্পরকে রক্তাক্ত করছিল। প্রথমে পুকুরপাড়ের জঙ্গলের মধ্যে সাপ দুটিকে দেখা যায়। সেখান থেকে মারামারি করতে করতে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। পানির মধ্যেও মাথা উঁচু করে মারামারি করতে থাকে। পানি থেকে আবার ডাঙায় ওঠে। চলতে থাকে যুদ্ধ। এভাবে প্রায় ৩২ মিনিট ধরে চলা মারামারি শেষ হয় অগণিত মানুষের হইচই ও চিৎকারে। পরে সাপ দুটি জঙ্গলে হারিয়ে যায়।’

নাটোরের পরিবেশ আন্দোলনকর্মী ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, একটি স্ত্রী সাপের সঙ্গে যখন একাধিক পুরুষ সাপের মিলনের সম্ভাবনা তৈরি হয়, তখন ওই পুরুষ দুটি সাপ নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। স্ত্রী সাপের সঙ্গ পেতে নিজেদের মধ্যে সেগুলো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় সেগুলো মানুষকেও ভয় পায় না।

দাঁড়াশ সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Ptyas mucosa। ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান র‍্যাট স্নেক বা ওরিয়েন্টাল র‍্যাট স্নেক নামে পরিচিত। বিষহীন এই সাপ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। এগুলোর দেহের রং হালকা বাদামি বা হলুদ বাদামি কিংবা জলপাই বাদামি। সাপটিকে গোখরা সাপ বলে ভ্রম হতে পারে। এ কারণে সাপটি মানুষের হাতে বেশি মারাও পড়ে। এগুলোর সাধারণত কোনো ফণা থাকে না এবং এগুলোর মাথা গোখরা সাপের মাথার তুলনায় বেশ সরু। লম্বায় ৫ থেকে সাড়ে ৬ ফুট, তবে কোনো কোনোটি ১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। দাঁড়াশ সাপ গাছ বেয়ে উঠতে দক্ষ। সাঁতার কাটতে, ডুব দিয়ে থাকতে ও দ্রুত ছুটতে পারে এগুলো। ধরা পড়ার পর কিছুটা মারমুখী দেখালেও পরে খুব সহজেই পোষ মেনে যায়। ইঁদুর, ছুঁচো, ব্যাঙ ইত্যাদি খেয়ে দাঁড়াশ সাপ জীবন ধারণ করে। শিকার ধরামাত্রই গিলতে শুরু করে।