আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের সাক্ষাৎকার

দলীয় প্রতীকের বিরোধিতা করলেই বহিষ্কার

সারা দেশে তৃতীয় দফায় ২৮ নভেম্বর যেসব ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন হবে, এর মধ্যে সিলেট বিভাগের চার জেলা সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের ৭৭টি ইউপি আছে। এসব ইউপিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে ‘বিদ্রোহী’ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলটির ৮০ জন নেতা-কর্মী। এ বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনের সঙ্গে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন
ছবি : সংগৃহীত
প্রশ্ন

‍প্রথম আলো: সিলেট বিভাগের চার জেলার ৭৭টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে দলের ৮০ জন নেতা-কর্মী ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

আহমদ হোসেন: দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে আওয়ামী লীগের যেসব নেতা-কর্মী বিভিন্ন ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট ইউপি ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের কাছে বিদ্রোহী প্রার্থীর নামের তালিকা চাওয়া হয়েছে। সে তালিকা ধরে এরই মধ্যে অনেককে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদের তালিকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় প্রতীকের বিরোধিতা করলেই বহিষ্কার, এ বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী-সমর্থক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন—এমন অভিযোগও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ তৃণমূলের নেতারা করছেন। এ ব্যাপারে আপনাদের ভাবনাচিন্তা কী?

আহমদ হোসেন: তাঁদের তালিকাও করা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। মোট কথা, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ যেতে পারবেন না।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনাদের জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মীর ভাষ্য, স্থানীয় নির্বাচনে গ্রাম ও গোষ্ঠীকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব-আধিপত্য বিস্তারসহ নানা আঞ্চলিক ইস্যুর কারণে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়েও অনেকে প্রার্থী হচ্ছেন। আবার একই কারণে সেসব বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও কাজ করছেন। আসলেই কী তাই?

আহমদ হোসেন: এটা স্থানীয় নেতাদের বক্তব্য। এটা আমার বক্তব্য নয়। আমার বক্তব্য হচ্ছে দল নৌকা প্রতীক দিয়েছে, তাই নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করতে হবে। নৌকা প্রতীকের বিরোধিতা করে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের কোনো কর্মকাণ্ডই পরিচালনা করা যাবে না।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে বিভিন্ন ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জয় পেতে কি সমস্যা হতে পারে?

আহমদ হোসেন: কিছু ভোট হয়তো নষ্ট করতে পারে। তবে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না। দলীয় কর্মীরা যদি সব ইউপিতে এক থাকেন, তাহলে বিদ্রোহী প্রার্থীরা কোনো ভোটই নষ্ট করতে পারবেন না। আমরা বিশ্বাস করি, যাঁরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বাস করেন, তাঁরা নৌকার পক্ষে এককাট্টা থাকবেন।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: অনেক ইউপিতে চেয়ারম্যান পদের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অভিযোগ ছিল, প্রার্থিতা পেতে কোথাও কোথাও ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে টাকার লেনদেন করতে হয়েছে। তৃণমূলে প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে যখন ভোটাভুটি হয়, তখন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়ার চেষ্টাও অনেক প্রার্থী করেছেন—এমন কথাও চাউর আছে। এ তথ্যের সত্যতা কতটুকু?

আহমদ হোসেন: এমন কোনো অভিযোগ আমার কানে আসেনি। এসব অভিযোগ হচ্ছে বিএনপির কিছু বানোয়াট গল্পের মতো। এগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণা। মনোনয়ন না পেয়ে অনেকে এমন বানোয়াট গল্প সাজাচ্ছেন। কোনো নেতার বিরুদ্ধে যদি এমন অভিযোগের সত্যতা কেউ প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে অবশ্যই ওই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।