পরিবারের দাবি, দণ্ডপ্রাপ্ত মানিক মিয়ার বদলে মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে
দুজনের নামই মানিক। একজনের নামের শেষাংশ মিয়া, অন্যজনের হাওলাদার। একজনের গ্রামের নাম ব্যাপারী কান্দি, অন্যজনের আলম চান ব্যাপারী কান্দি। দুজনের বাড়িই শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখীপুর ইউনিয়নে।
গত বছরের ২৮ নভেম্বর মাদকের একটি মামলায় এক মানিককে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাঁর নামের শেষাংশে হাওলাদার। তাঁর পরিবার বলছে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মানিক মিয়ার বদলে মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নথিপত্র দেখে ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানিক হাওলাদারের বাবার নাম নজরুল ইসলাম। আর মানিক মিয়ার বাবা ইব্রাহীম মৃধা। তবে মামলার নথিপত্রে মানিক মিয়ার বাবার নাম উল্লেখ আছে নজরুল হাওলাদার।
ঘটনার বিষয়ে জানতে গত বৃহস্পতিবার ব্যাপারী কান্দি গ্রামে মানিক মিয়ার বাড়ি যান এই প্রতিবেদক। সেখানে কথা হয় ইব্রাহীম মৃধার সঙ্গে। তিনি স্বীকার করেন, মাদক মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মানিক মিয়া তাঁর ছেলে। নামের আংশিক মিল থাকার কারণে পাশের গ্রামের আরেক মানিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মানিক হাওলাদারের স্ত্রী সালমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী নদীতে মাছ শিকার করেন। বিনা দোষে আমার স্বামী তিন মাস যাবৎ কারাগারে আছেন।’
শরীয়তপুরের সখীপুর থানা সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল–১–এ একটি মাদক মামলার চার বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. মানিক মিয়া, পিতা নজরুল হাওলাদার, গ্রাম ব্যাপারী কান্দির নামে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর সখীপুর থানায় আসে। আর সখীপুর থানার পুলিশ গত বছর ২৮ নভেম্বর ওই থানার আলম চান ব্যাপারী কান্দি গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে। তিনি বর্তমানে সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে।
মামলার এজাহার ও থানা সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২ জুন র্যাব অভিযান চালিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে ফেনসিডিলসহ চার ব্যক্তিকে আটক করে। র্যাবের পক্ষ থেকে ওই দিন সলঙ্গা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে চার ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করা হয়। আসামিদের একজন শরীয়তপুরের ব্যাপারী কান্দি গ্রামের মানিক মিয়া। গ্রেপ্তারের কিছুদিন পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর থেকে তিনি পলাতক। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি এ মামলার রায়ে চার আসামিকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর পরিবার গত ৩০ নভেম্বর শরীয়তপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করে। সে সময় তিনি প্রকৃত আসামি নন—এ কথা উল্লেখ করে তাঁর সপক্ষে কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়। তখন আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করা সহকারী উপপরিদর্শক শামসুর রহমানকে লিখিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করার নির্দেশ দেন। ৯ ডিসেম্বর এএসআই শামসুর রহমান আদালতে উপস্থিত হয়ে দাবি করেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আসামি হিসেবে লেখা নামের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় ও এই নামে অন্য কোনো ব্যক্তি না থাকায় তিনি তাঁকে গ্রেপ্তার করেছেন।
জানতে চাইলে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামির নাম ও বাবার নামে মিল থাকায় মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এতে পুলিশের কোনো ভুল নেই।
মানিক হাওলাদারের মুক্তি চেয়ে তাঁর স্ত্রী সালমা বেগম ২ মার্চ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ বিষয়ে সালমার আইনজীবী পার্থ সারথী রায় প্রথম আলোকে বলেন, গত বুধবার (৩ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়। কাল রোববার (৭ মার্চ) শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। সেদিন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারকে (এসপি) তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।