দক্ষিণাঞ্চলের ৩১টি নৌপথের মধ্যে ২৭টি নাব্যতাসংকটে

প্রতি শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতাসংকট তীব্রতর হয়। নৌ চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটছে।

নৌপথে নাব্যতা সংকট দূর করতে খননযন্ত্র দিয়ে পলি অপসারণ করা হচ্ছে

নাব্যতা সংকটে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথগুলো। এতে নৌযান চলাচল হুমকিতে পড়েছে। বরিশাল বিভাগে ৩১টি নৌপথের মধ্যে মাত্র চারটিতে নৌযান চলাচলের পর্যাপ্ত নাব্যতা আছে। বাকি ২৭টি নৌপথে নৌ চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটছে। প্রতি শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতাসংকট তীব্রতর হয়।

বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র বলছে, প্রতিবছরই দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথের নাব্যতা রক্ষায় খননকাজ চালানো হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে বছর ঘুরতেই পলি জমে আবার নাব্যতাসংকট দেখা দেয়। ফলে আর্থিক ব্যয়ের পাশাপাশি ভোগান্তি লেগেই থাকে। এ জন্য এখন এসব নৌপথের টেকসই উন্নয়নের দিকে জোর দিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথ নিয়ে একটি বড় ধরনের সমীক্ষা চালানো হয়েছে। নৌপথের টেকসই সুরক্ষার পাশাপাশি নদীর সীমানা পুনরুদ্ধার, জলাভূমির বাস্তু পুনরুদ্ধার করে সেচব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জলাবদ্ধতার মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা প্রতিরোধ করে সুষ্ঠু ও পরিকল্পিত নদী ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া হচ্ছে। ‘বরিশাল বিভাগের নদীসমূহের নাব্যতা বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা হ্রাস, জলাভূমি বাস্তু পুনরুদ্ধার, সেচ ও ল্যান্ডিং সুবিধাদি বৃদ্ধি করে নদী ব্যবস্থাপনার সম্ভাব্যতা যাচাই’ শীর্ষক সমীক্ষাটি শেষ হয় গত ডিসেম্বরে।

ওই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবহমানকাল ধরে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের প্রধান ও জনপ্রিয় মাধ্যম নৌপথ। এর ওপরে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথগুলোর গুরুত্ব আরও অনেক বেড়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বরিশাল বিভাগে ৬২টি নদীতে ৩১টি নৌপথ রয়েছে। নদীপথের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে মাত্র চারটি নৌপথে পর্যাপ্ত গভীরতা রয়েছে। বাকি ২৭টি নৌপথের মধ্যে তিনটি পথ ‘১২ ও ২৪ নেভিগেশন রুট ’ প্রকল্পের আওয়তায় রক্ষণাবেক্ষণ খনন এবং একটি পথ বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের আওতায় খনন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাকি ২৩টি নৌপথের পর্যাপ্ত নাব্যতা বা পানির গভীরতা নেই। এতে নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। প্রতিনিয়ত যাত্রীদের ভোগান্তি হচ্ছে।

যেসব নৌপথ সংকটে

বাকেরগঞ্জ-মির্জাগঞ্জ ৩৫ কিলোমিটারের নৌপথের রামপুর সেতু থেকে ভাটিতে নৌযান চলাচলে পর্যাপ্ত পানির গভীরতা নেই। আবার বরিশাল-ঝালকাঠি-বরগুনা-পাথরঘাটা ১১৭ কিলোমিটার নৌপথের নিয়ামতি ও মোকামিয়া ঘাটের সামনে নাব্যতাসংকট রয়েছে। এ ছাড়া হিজলা-সাতহাজার বিঘা-বরিশাল ৬১ কিলোমিটার পথের আজিমপুর নদীতে, ভান্ডারিয়া-পশারিবুনিয়া-ইকরি-তুষখালি ৩৬ কিলোমিটার নৌপথের ভান্ডারিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে গভীরতা নেই।

সমীক্ষার সংক্ষিপ্ত বিবরণীতে বলা হয়েছে, ৩১টি নৌপথের মধ্যে বাকেরগঞ্জ থেকে মির্জাগঞ্জ ৩৫ কিলোমিটার পথের সীমান্ত নালা নদী বাকেরগঞ্জে শুকিয়ে গেছে। ভান্ডারিয়া থেকে পশারিবুনিয়া ও ইকরি হয়ে তুষখালি পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার পথের পোনাদন নদী পাশারিবুনিয়া থেকে ইকরি পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে। এ ছাড়া গাবখান থেকে ধানসিঁড়ি-রাজাপুর হয়ে নিয়ামতি বাজার পর্যন্ত ২৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার নৌপথের রাজাপুরে ধানসিঁড়ি নদীও শুকিয়ে গেছে।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম তালুকদার বলেন, সমীক্ষায় উঠে এসেছে দক্ষিণের এসব নৌপথের নাব্যতা ফেরাতে ৪৭০ কিলোমিটার নদীর খনন প্রয়োজন। বড় ধরনের এই খনন (ক্যাপিটাল ডেজিং) থেকে ৪ কোটি ২০ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ হবে। পরে নাব্যতা ধরে রাখার জন্য আরও সাত বছর সংরক্ষণ খননের আওতায় প্রায় ১ কোটি ৭ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণের সুপারিশ করা হয়েছে।