বয়স আশি ছুঁই ছুঁই। শরীরে অসুস্থতা লেগেই আছে। কদিন ধরে আবার শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে আরজ খানের। বন্যায় প্রায় এক সপ্তাহ ঘরে হাঁটুসমান পানি ছিল। এখন পানি নেমে গেলেও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বন্যার পর থেকে বিভিন্নজনের সাহায্যে কোনোমতে সংসার চলছে।
আজ রোববার ত্রাণসামগ্রীর একটি প্যাকেট পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের আসামপাড়া গ্রামের এই বাসিন্দা। চোখ দিয়ে মনের অজান্তে পানি চলে আসে আরজ খানের। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির লাগি ছেলে বারইতে পারে না। মোটরসাইকেলে যাত্রী ওঠে না। যাত্রী না থাকলে ছেলে আয় করব কিলা?’
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আরজ খানের মতো জাফলংয়ের আসামপাড়ার ১০০ জন পেয়েছেন ত্রাণসামগ্রী। প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় রোববার বিকেলে জাফলংয়ের হাজী সোহরাব আলী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণে এই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রত্যেকের হাতে ১০ কেজি চাল, এক লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি মসুর ডাল, এক কেজি ছোলা, এক কেজি লবণ, ১০০ গ্রাম গুঁড়া মরিচ ও ১০০ গ্রাম গুঁড়া হলুদ তুলে দেওয়া হয়। ত্রাণ পেয়ে সবাই খুশিমনে বাড়ি ফেরেন।
ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে বক্তব্য দেন গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলাম, হাজী সোহারাব আলী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক মো. তাজুল ইসলাম। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সিলেট প্রতিনিধি মানাউবী সিংহ।
বক্তৃতায় কে এম নজরুল ইসলাম প্রথমে বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য প্রথম আলো এবং আইডিএলসিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রথম আলো কেবল বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ প্রচার করে বসে থাকেনি, দুর্গত এলাকার মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে। নিজেদের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে পত্রিকাটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে সমাজের আরও বিভিন্ন মহলের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে এগিয়ে আসার বার্তা দিচ্ছে।
হাজী সোহারাব আলী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের তাজুল ইসলাম ত্রাণসামগ্রী নিয়ে আইডিএলসি ও প্রথম আলো দুর্গত এলাকায় আসার উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। তিনি প্রতিষ্ঠান দুটিকে ভবিষ্যতেও দুর্গত মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানান।
ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হাজী সোহারাব আলী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম, সমাজকর্মী আফাজ উদ্দিন, সোলেমান শিকদার, ইব্রাহিম আলী, প্রথম আলো সিলেট কার্যালয়ের আলোকচিত্রী আনিস মাহমুদ, গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এমরুল হাসান, প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক অন্তর শ্যাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মিহরাব আহমদ চৌধুরী, সদস্য জন্নাতুল ফেরদৌস, ফাবলিহা শাহ ফরিদী, হাজী সোহারাব আলী উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের জাফলং সেবা ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক নাদিম আহমদ প্রমুখ।
আসামপাড়া হাওরের বাসিন্দা ছামিরন বেগমের (৪০) স্বামী মুসলিম আকন্দের প্রায় ছয় মাস আগে ক্যানসার ধরা পড়েছে। স্বামী এখন শয্যাশায়ী। তাতে সংসারের ভার পড়েছে তাঁর ওপর। এমন অবস্থায় পাঁচ সদস্যের সংসার নিজে অন্যের বাড়ি কাজ করে চালাচ্ছেন ছামিরন বেগম। ত্রাণ পেয়ে আপ্লুত ছামিরন বলেন, বন্যার সময় কোমরসমান পানির কারণে পাঁচ দিন চুলা জ্বালাতে পারেননি। সে সময় স্বজনের বাড়িতে অসুস্থ স্বামী ও দুই মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছিল।
নবমখণ্ড গ্রামের ইউসুফ খাঁ (৭০) বলেন, বন্যার কারণে কাজকাম ছিল না। যে সহযোগিতা পেয়েছেন, সেটি দিয়ে ১০ দিনের মতো পরিবারের সদস্যদের খাবার জোগাতে পারবেন। এতে তিনি স্বস্তি পেয়েছেন।
বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে।