প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগ

ত্রাণের প্যাকেট পেয়ে কয় দিনের খাওয়ার চিন্তা দূর হলো তাঁদের

ত্রাণ পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফেরেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার শিবনগর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আজিজ আলী। আজ শনিবার দুপুরে শিবনগর গ্রামে
ছবি : প্রথম আলো

‘পুয়া-পুরি (ছেলে-মেয়ে) নিয়া বড়ই অভাবে আছি। বেমার (অসুস্থ) হওয়ায় কাম করতে পারলাম না। বাচ্চার মায়ে সংসার চালাইতাছইন। বানের পানি বুকসমান আছিল। দুই দিন আগে আশ্রয়কেন্দ্র থাকি ঘরে ফিরছি। খাওনদাওনের কষ্টে আছি, ঘরে কুনতাই নাই। এই অভাবের সময় ত্রাণ পাইয়া কয়টা দিনের জন্য চিন্তা দূর হইল।’

ত্রাণের একটি প্যাকেট পেয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানালেন আজিজ আলী (৬২)। তিনি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার শিবনগর গ্রামের বাসিন্দা।

প্রথম আলো ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনায় ও আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের সহায়তায় আজিজ আলীর মতো ১৮০ জনের হাতে ত্রাণসামগ্রীর প্যাকেট তুলে দেওযা হয়েছে। সিলেটের বিশ্বনাথ ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হয়। এ উপলক্ষে আজ শনিবার দুপুরে বিশ্বনাথের দিঘলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে এবং ছাতকের শিবনগর গ্রামে পৃথক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সেখানে প্রত্যকের হাতে পাঁচ কেজি করে চাল, এক লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি মসুর ডাল, এক কেজি আটা, এক কেজি লবণ, ১০০ গ্রাম গুঁড়ামরিচ ও ১০০ গ্রাম করে গুঁড়াহলুদ তুলে দেওয়া হয়। দুঃসময়ে ত্রাণ পেয়ে উচ্ছ্বসিত মানুষজন মাথায়, ঘাড়ে কিংবা হাতে করে ত্রাণের প্যাকেট নিয়ে বাড়ি ফেরেন।

ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় গোবিন্দগঞ্জ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক দেবাশীষ কুমার সরকার, সমাজকর্মী বাহাউদ্দিন আহমেদ ও আতাউর রহমান। এ ছাড়া প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক অন্তর শ্যাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মিহরাব আহমেদ চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আহমেদ, পাঠাগার ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক দৃষ্টি রানী বর্মণ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষক দেবাশীষ কুমার সরকার বলেন, ‘প্রথম আলো যখন প্রকাশিত হওয়া শুরু করে, তখন আমি কলেজশিক্ষার্থী। শুরু থেকেই এ পত্রিকার সঙ্গে আছি। এখন শিক্ষকতা জীবনেও এ পত্রিকা নিত্যসঙ্গী। একটি পত্রিকা কীভাবে সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমজনতার সুখ-দুঃখে মিশে যেতে পারে, এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ বন্যার্তদের সহায়তায় আয়োজিত এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। প্রথম আলো এবং আইডিএলসিকে ধন্যবাদ বন্যাকবলিত মানুষের পাশে থাকার জন্য।’

ত্রাণ নিতে দুই উপজেলার দীঘলগাঁও, দত্তপুর, কালীদাশপাড়া, খোঁজারপাড়া, মাধবপুর, শিবনগর, রাধানগর, সিঙ্গুয়াসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা এসেছিলেন। তাঁদের একজন স্বামীহারা ষাটোর্ধ্ব কাজল বেগম। তাঁর মেয়ে রহিমা আক্তার (৩৯) জন্মের পর থেকে বোবা ও বধির। মেয়েকে নিয়ে কষ্টের সংসার তাঁর। তিন ছেলে থাকলেও তাঁরা বিয়ে করে মা-বোনকে ফেলে অন্যত্র বসবাস করেন। এ অবস্থায় গৃহপরিচারিকার কাজ করে মেয়েকে নিয়ে অতি কষ্টে সংসার চালান কাজল। বন্যায় ঘরে বুকপানি হলে মেয়েকে নিয়ে প্রথমে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে, পরে আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেন। শিবনগর গ্রামের বাসিন্দা কাজল বলেন, ‘তিন ছেলে ছাইড়া গেছে। প্রতিবন্ধী মেয়েরে লইয়া বুড়া বয়সে মাইনষের বাড়ি কাম কইরা জান বাঁচাই। চাইল, ডাইল, তেল পাইয়া ভালা লাগতাছে।’

বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন

বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট বা ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপের ডোনেশনের মাধ্যমেও আপনার সহযোগিতা পাঠাতে পারেন।