নারায়ণগঞ্জে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার আট বছর পূর্ণ হয়েছে আজ শনিবার। এ উপলক্ষে কবরে ফুল দিয়ে ত্বকীকে স্মরণ করেছেন নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সকাল সাড়ে ৯টায় বন্দর উপজেলার মোল্লা বাড়ি এলাকায় সিরাজ শাহর আস্তানায় ত্বকীর কবরে ফুল দেন তাঁরা। এ ছাড়া কবর জিয়ারত ও দোয়া করা হয়।
ত্বকীর কবরে ফুল দিয়ে স্মরণ ও তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, ন্যাপের নারায়ণগঞ্জ জেলা সম্পাদক আওলাদ হোসেন, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিখিল দাস, জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর জেলা সভাপতি জাহিদুল হক দীপু, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর, সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল ও প্রদীপ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু সুফিয়ান, খেলাঘরের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফারুক মহসিন, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন প্রমুখ।
আমরা শপথ নিয়েছি, যত দিন না ত্বকী হত্যার বিচার হবে, তত দিন আমরা রাজপথে থাকব, আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ভবানী শংকর, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি
ত্বকীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর ভবানী শংকর বলেন, ‘ত্বকীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। আমরা অবশ্যই ত্বকী হত্যার বিচার চাই। ত্বকীর খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। আমরা শপথ নিয়েছি, যত দিন না ত্বকী হত্যার বিচার হবে, তত দিন আমরা রাজপথে থাকব, আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে জিয়াউল ইসলাম বলেন, আট বছরেও ত্বকী হত্যার বিচার হয়নি। ত্বকীর খুনিদের গ্রেপ্তারের জন্য বারবার দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু ঘাতকদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, মামলার তদন্তকারী সংস্থা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করছে না। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করব, ত্বকী হত্যার বিচার শুরুর নির্দেশ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।’
আজমেরী ওসমানসহ ত্বকীর সব ঘাতককে গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানান আওলাদ হোসেন। জাহিদুল হক তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। র্যাবের অভিযোগপত্র আটকে দেওয়া হয়েছে। ত্বকী হত্যার বিচার একদিন হবেই। বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বেন না।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জের শায়েস্তা খান রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ত্বকী। ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
ত্বকী হত্যাকাণ্ডের এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালের ৫ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করেন তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান। তিনি তখন বলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন ত্বকী হত্যায় অংশ নেন। শিগগিরই এ বিষয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
সেই অভিযোগপত্র এখনো দাখিল করা হয়নি। এরপর থেকে ত্বকী হত্যার বিচার দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক জোট।